• এক হাত নেই, বাড়িতে অভাব, তাও গোলের খিদে তাড়িয়ে বেড়ায় ঋতুকে 
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, গোয়ালতোড়: অভাবের সংসারে ভালো মতো খাবার জোটে না। বোধহয় তাই গোলের খিদে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় গোয়ালতোড়ের ঋতু সরেনকে। ছোটবেলায় সাইকেল থেকে পড়ে খুইয়েছিলেন একটি হাত। কিন্তু তাতে কী! একহাত নিয়েই ফুটবল মাঠ কাঁপাচ্ছেন তিনি। রাজ্য সরকারের দেওয়া ট্যাবে মেসি, রোনাল্ডোদের খেলা দেখে এক শটে গোল করা শিখতে চেষ্টা করেন। রেশনের চালের ভাত খেয়েই পড়াশোনার পাশাপাশি চলে প্র্যাকটিস। গড়বেতা-২ ব্লকের গোয়ালতোড়ের রেংটিয়া গ্রামের ঋতু বর্তমানে সাঁওতাল বিদ্রোহ সার্ধ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। স্ট্রাইকার পজিশনে তিনি খেলেন। তাঁর গোলের খিদে তাজ্জব করেছে ফুটবলপ্রেমীদের। বেশকিছু ফুটবল টুর্নামেন্টে পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন, একদিন তিনি দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলে নজর কেড়েছেন ঋতু। অভাবকে জয় করে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন। তাঁর ঝুলিতে বেশকিছু নজরকাড়া গোলও রয়েছে। 


    ঋতু বলেন, ট্যাবেই রোনাল্ডো, মেসির খেলা দেখি। অনেক কিছু শিখেছি। আমি আগামী দিনে দেশের হয়ে খেলতে চাই। সরকারি বেশকিছু প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছি। তবে অভাবের জন্য ভালো মানের ফুটবল খেলার সরঞ্জাম নেই। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। এছাড়া বন্ধু শ্রাবণী মুর্মু প্রচুর সহযোগিতা করেন। তিনি আরও বলেন, স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা মোবাইল ফোন ছেড়ে মাঠে ফিরুক। এতে লাভবান হবে আমাদের সমাজ। 


    প্রসঙ্গত, এক দিনমজুরের পরিবারে জন্ম ঋতুর। তাঁর বাবা লুকুই সরেন ও মা রমণী সরেন চাষের জমিতে দিনমজুরি করেন। তাঁর দুই দিদি এক ভাই রয়েছে। ২০১২ সালে সাইকেল চালাতে গিয়ে আচমকা পড়ে যান তিনি। তাঁর বাম হাত ভেঙে যায়। ভুল চিকিৎসার জন্য তাঁর হাতটি বাদ দিতে হয়েছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। কিন্তু মনের জোর হারাননি ঋতু। স্থানীয় মাঠে ফুটবল খেলা হলেই তিনি ছুটে যেতেন। ফুটবল খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। প্রথমে স্কুলের হয়ে, পরে কলেজের হয়েও বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তাঁর সাফল্যে খুশি স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীরা। জানা গিয়েছে, ম্যাচ খেলার জন্য ভালো জুতো নেই তাঁর। রেশনের চালের ভাত খেয়েই তাঁকে প্র্যাকটিসে যেতে হয়। 


    মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন জাতীয় খাবার পান না। জোটে না দুধের মতো সুষম পানীয়। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ টুডুর কথায়, এই এলাকায় খেলাধুলোর পরিকাঠামো আরও উন্নত হওয়ার প্রয়োজন। অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় দারিদ্রের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এই খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ালে খুবই উপকার হবে। 


    এদিন গড়বেতা-২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে বলেন, উনি মেদিনীপুর জেলার গর্ব। ওঁর প্রতিভা নজরে এসেছে। জেলা প্রশাসনের তরফে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। চাইব, ঋতু একদিন রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করবে।


     ঋতু সরেন।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)