নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বিদেশে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে সাইবার প্রতারণা। কম্পিউটার হ্যাক করে বদলে দেওয়া হচ্ছে ই-প্রেসক্রিপশনের ওষুধ। এর জেরে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। সুতরাং হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। বুধবার জলপাইগুড়িতে উত্তরবঙ্গের দু’টি মেডিক্যালের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই বার্তা দিলেন রাজ্যের সিকিউরিটি অডিট কমিটির চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত পুলিসকর্তা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ।
সিসি ক্যামেরা, প্যানিক বোতাম, বায়োমেট্রিক লক বসানোর পরও হাসপাতালের নিরাপত্তায় কোথায়, কী খামতি থেকে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। একইসঙ্গে হাসপাতালে রোগী পরিষেবায় চিকিৎসকরা কোনওভাবেই দায়সারা মনোভাব দেখাতে পারবেন না বলে এদিনের বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেন সুরজিৎবাবু। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, একজন চিকিৎসকের অধীনে যদি কোনও মুমূর্ষু রোগী থাকে, ২৪ ঘণ্টা সেই রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। এমনকী এ ব্যাপারে রোগীর পরিবারের পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও প্রতি ঘণ্টায় রিপোর্ট দিতে হবে। শুধুমাত্র রাউন্ডের সময় এলাম, রোগী দেখে চলে গেলাম, মোটেই এমনটা করা যাবে না। একজন চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হওয়া কোনও রোগীর যদি অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই চিকিৎসক নিজের কাঁধ থেকে ওই রোগীর দায়িত্ব একেবারেই ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না। আইসিইউ-র চিকিৎসক রোগীকে যে পরিষেবা দেওয়ার দেবেন। কিন্তু যে চিকিৎসকের অধীনে ওই রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁকেও দিনে দু’বার করে আইসিইউ-তে গিয়ে মনিটরিং করতে হবে। রাজ্য সরকার হাসপাতালে রোগীদের জন্য নিখরচায় সমস্ত পরিষেবা দিচ্ছে। কিন্তু তা না পেয়ে একজন রোগীও যাতে বেসরকারি হাসপাতালে চলে না যায়, সে ব্যাপারে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে বলে বৈঠকে জানিয়ে দেন সুরজিৎবাবু।
তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে কী কী পরিষেবা মিলছে, প্রয়োজনে তা ডিস প্লে বোর্ডে লিখে দিতে হবে। মাইকিং করতে হবে। চিকিৎসক থেকে নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নিরাপত্তাকর্মী সবার জন্য ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক বলে জানিয়ে দেন সিকিউরিটি অডিট কমিটির চেয়ারম্যান। হাসপাতালের ফায়ার সেফ্টির উপর জোর দেন তিনি। বৈঠকের পর জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে পরিদর্শন করেন ৯ সদস্যের ওই ‘হাইপাওয়ার কমিটি’র প্রতিনিধিরা।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের সুপার ডাঃ কল্যাণ খাঁ বলেন, আমাদের আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া আছে, যে চিকিৎসকের অধীনে কোনও মুমূর্ষু রোগী ভর্তি থাকবেন, দিনে সেই রোগীর সম্পর্কে অন্তত ছ’বার আমাদের রিপোর্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। এই নির্দেশ আরও কড়াভাবে কার্যকর করা হবে। জলপাইগুড়িতে মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনের পর বৈঠকে রাজ্যের সিকিউরিটি অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সহ অন্য আধিকারিকরা। - নিজস্ব চিত্র।