অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর অমিল, অন্তঃসত্ত্বা, শিশুদের খাবার রান্না হচ্ছে গোয়ালঘরে!
বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: সরকারি প্রতিশ্রুতির অভাব না থাকলেও রাজ্যের বহু আইসিডিএস বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আজও নিজস্ব কোনও ঘর নেই। কোথাও অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে, কোথাও আবার রাস্তার পাশে চলছে বহু কেন্দ্র। এমনকী, দুই ২৪ পরগনা জেলার দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে গোয়ালঘরে! অপরিসর ও অস্বাস্থ্যকর জায়গায় দিনের পর দিন রান্না হচ্ছে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মায়েদের খাবার।
নামখানার শিবনগর আবাদ এলাকার ৩১৯ নম্বর পুণ্যপ্রতিভা আইসিডিএস কেন্দ্রটি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে একটি গোয়ালঘরে চলছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির নিজস্ব বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সরকার সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়ে, তা হল জমি না পাওয়া। অথচ এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নামে আড়াই শতক জায়গা রয়েছে। কিন্তু আজও ঘর তৈরি হয়নি সেখানে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রটি চালু হওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দা পুণ্যচন্দ্র তুঙ্গের বাড়িতেই তা চলত। কয়েক বছর পর বাড়ির উঠোনে শিশুদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু রোদ ও বৃষ্টির সময় খুব সমস্যা হতো। তাই তুঙ্গ পরিবার তাদের গোয়ালঘরে কেন্দ্রটি চালাতে বলে। সেই থেকে চলে আসছে এভাবেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সমস্যার কথা বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। মিলেছে কেবল আশ্বাস। গোয়ালঘরটি যাঁদের, সেই কল্যাণী তুঙ্গ বলেন, ‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নতুন বাড়ি তৈরির জন্য বাবা আড়াই শতক জায়গা দানপত্র করে দিয়েছেন। কিন্তু আজও একটা ইট পড়েনি।’ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সুপ্রিয়া মান্না বলেন, ‘গোয়ালঘরের একপাশে জ্বালানি কাঠ ডাঁই করে রাখা থাকে। সাপ, ব্যাঙ ও টিকটিকির সঙ্গেই বসতে হয়। তাই এখন শিশুরা কেউ এখানে আসতে চায় না। কোনওরকমে রান্না করে সবাইকে দিয়ে দেওয়া হয়।’ নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিষেক দাস বলেন, ‘কিছুদিন আগে এই সমস্যার রথা শুনেছি। অবশ্যই ওই কেন্দ্রের একটি ভবন তৈরি করে দেওয়া হবে।’ উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার পশ্চিম চ্যাংদানা গ্রামের ৩৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অবস্থাও অনেকটা এক। এখানে অবশ্য গত দু’বছর ধরে তৈরি হয়েই চলেছে আইসিডিএসের নিজস্ব ভবন! সেই কাজ কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। অগত্যা প্রায় ১৩ বছর ধরে কেন্দ্রটি কখনও রাস্তার পাশে, কখনও কারও বাড়ির উঠোনে, কখনও আবার কারও গোয়ালঘরে চলছে। খোলা আকাশের নীচে হচ্ছে রান্না। রাস্তায় বাইক বা বড় গাড়ি এলে শিশুদের সরে যেতে হচ্ছে। তারপরও এই কেন্দ্রে নথিভুক্ত শিশু ও মহিলার সংখ্যা ৬৩। গ্রামবাসীরা চাইছেন, দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হোক। সেন্টারের সহায়িকা প্রতিমা মাহালি বলেন, ‘আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি বাচ্চাদের কখন কী হয়ে যাবে ভেবে। আমাদের সেন্টারের নিজস্ব বাড়ির কাজ দ্রুত শেষ হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাই। কিন্তু তা কবে হবে, কেউ জানে না।’ দেগঙ্গার বিডিও ফাহিম আলমের অবশ্য আশ্বাস, ‘দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’