• টিউবওয়েল চুরি! তা-ও কি সম্ভব? কীভাবে ঘটছে এমন ভূতুড়ে চৌর্যকাণ্ড? কেনই-বা?
    ২৪ ঘন্টা | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • অরূপ লাহা: এলাকায়-এলাকায় চালু হয়েছে সজলধারা প্রকল্প। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ হচ্ছে পানীয় জল। তাই পঞ্চায়েতের বসানো টিউবওয়েলগুলির অধিকাংশই অব্যবহৃত এবং কোথাও কোথাও অনেকাংশে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে বহু এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতের বসানো বেশ কয়েকটি টিউবওয়েল তুলে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনই এক অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুমশোর গ্রামেও।

    ঘটনার কথা ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়ে গিয়েছে। জানাজানি হতেই অস্বস্তিতে পড়েছে ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েত। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিটি বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয়জল সরবরাহ করার কাজ চলছে। সেই অনুযায়ী গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন ছোট বড় জলপ্রকল্প চালু করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আগে গ্রামে-গঞ্জে পানীয় জলের উৎস ছিল টিউবওয়েল। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিটি গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে মোট ২৬ টি সংসদ। এই ২৬ সংসদ মিলে পঞ্চায়েতের বসানো ৫৩৬ টিউবওয়েল ছিল এলাকায়! আর এখন জলস্তর নেমে যাওয়ায় বহু টিউবওয়েল বিকল হয়ে গিয়েছে। মেরামতির অভাবেও বেশ কিছু টিউবওয়েল বহুদিন ধরেই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। আর ইতিমধ্যেই গ্রামে গ্রামে পাইপলাইনে জল সরবরাহ হওয়ায় এবং অনেক বাড়িতে মিনি সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর ফলে টিউবওয়েল আর ততটা প্রয়োজনে লাগছে না গ্রামবাসীর। 

    আর এই সুযোগেই ভাতারের ভুমশোর গ্রামে চার পাঁচটি পুরনো টিউবওয়েল তুলে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুমশোর গ্রামে একাধিক জায়গায় রাস্তার ধারে পুরনো টিউবওয়েল তুলে ফেলা হয়েছে। কোথাও বোরিং করা অংশ এবং চাতাল মাটি চাপা দিয়ে দেওয়াও হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি সামনে আসে ফেসবুকে একটি পোস্ট করার পর। ওই পোস্টে ভুমশোর গ্রামের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে তিনটি টিউবওয়েল তুলে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে স্থানীয় এক ব্যক্তির দাবি, ওই টিউবওয়েল কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেনি। সেগুলি বিক্রি করে পাড়ায় পাড়ায় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    স্থানীয় বাসিন্দা সামসুন্নেহা খাতুন, জীবন্নেসা বেগমরা বলেন, আমাদের পাড়ার টিউবওয়েল চালু ছিল। এক দেড় মাস আগে পাশের গ্রামের এক কলমিস্ত্রি লোকজন এনে কলগুলি তুলে নিয়ে যান। আমরা জিজ্ঞাসা করাতে ওরা জানান, সজলধারা এসে গিয়েছে, তাই এগুলির প্রয়োজন নেই। তাই পঞ্চায়েত থেকে তুলে নিতে বলেছে। যদিও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সজলধারা প্রকল্পের জল দিনের নির্দিষ্ট সময়ে দেয়। তাই অন্য সময়ে অনেকেই টিউবওয়েলের উপরই ভরসা করেন।

    জানা গিয়েছে, পুরনো দিনের টিউবওয়েলগুলির যন্ত্রাংশ এবং লোহার পাইপগুলি যথেষ্ট মূল্যবান। নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চায়েতের অব্যবহৃত টিউবওয়েলগুলি তোলার পর সেই যন্ত্রাংশ ও পাইপ পঞ্চায়েতের হেফাজতেই থাকে। পরে সেগুলি নিলামে বিক্রি করে সেই টাকা পঞ্চায়েতের তহবিলে জমা করা হয়। কিন্তু সরকারি নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই ভুমশোর গ্রামের টিউবওয়েলগুলি কী ভাবে পাচার হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকাতেই। এ বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি। পঞ্চায়েতকে বলছি থানায় অভিযোগ করতে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)