সাজা হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছর। অথচ ওঁরা দু’জনে ইতিমধ্যেই প্রায় এক যুগ জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন! সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক সুদীপ্ত সেন এবং অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়।
রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় একের পর এক জামিন পাচ্ছেন অভিযুক্তেরা। জামিনের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। বিচার কবে শুরু হবে, তা নিশ্চিত নয়। এই পরিস্থিতিতে বিনা বিচারে অভিযুক্তকে জেলবন্দি রাখা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। অথচ এ রাজ্যেই আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রায় এক যুগ ধরে জেলে বন্দি আছেন ওই দুই অভিযুক্ত। সেই মামলায় বাকি অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে বাইরে ঘুরলেও তাঁদের বন্দিদশা ঘোচেনি। শুধু তা-ই নয়, নিম্ন আদালতে বিচার শুরু তো দূর, ঠিক মতো শুনানিও হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি সুদীপ্ত জেল থেকে সরাসরি আদালতে আর্জিপত্র (প্রিজ়নার্স পিটিশন) দাখিল করেছিলেন। তার পরেই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করায় কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি। এক দফা রিপোর্টও জমা পড়েছে কোর্টে। তাতে জানা গিয়েছে, ২১ নভেম্বর এই মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি অনসূয়া সিংহকে নির্দেশ দিয়েছে যে রাজ্য পুলিশের হাতে থাকা সারদা গ্রুপ অব কোম্পানিজ়-এর বিরুদ্ধে কতগুলি মামলায় এখনও চার্জশিট হয়নি, তার হিসেব দিতে। আজ, বৃহস্পতিবার মামলার পরবর্তী শুনানি। সুদীপ্ত সরাসরি কোর্টে আবেদন করলেও দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের তরফে আদালতে কিছু জমা পড়েনি।
এই মামলায় আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, বিনা বিচারে কার্যত জেলে আটকে আছেন সুদীপ্ত এবং দেবযানী। এই মামলায় প্রাপ্য শাস্তির বেশি সাজা ভোগ করে ফেলেছেন তাঁরা। বিচারের আগেই এ ভাবে সাজা ভোগ করা আইনি দিক থেকে ন্যায্য নয়।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন সুদীপ্ত ও দেবযানী। সেই মামলায় তদন্তেরও কোনও অগ্রগতি নেই। বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও তদন্তকারী সংস্থার কোনও উচ্চবাচ্য শোনা যায় না। ‘প্রিজ়নার্স পিটিশন’-এ সুদীপ্ত উল্লেখ করেছিলেন যে তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবীও নেই। তার পরে আইনজীবী নিয়োগ করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। বর্তমানে সুদীপ্তর হয়ে হাই কোর্টে সওয়াল করছেন আইনজীবী সাবির আহমেদ, সুজয় সরকার, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, প্রসূন মুখোপাধ্যায় এবং মৌমিতা পণ্ডিত।
আদালতে জমা পড়া তথ্য অনুযায়ী, এ রাজ্যে সুদীপ্তর বিরুদ্ধে ৩৮৯টি মামলা রুজু হয়েছিল। তার মধ্যে ৮১টি মামলা সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছিল। বাকি ৩০৮টি মামলা রাজ্য পুলিশের হাতে ছিল। এর মধ্যে সিবিআইয়ের সব মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। রাজ্যের হাতে থাকা মামলাগুলির মধ্যে ২৮২টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। রাজ্য ৩০৫টি মামলায় তাঁকে ‘ধৃত’ হিসেবে দেখিয়েছে। সূত্রের খবর, তিনটি মামলা বকেয়া পড়ে আছে যেখানে তদন্তই শুরু হয়নি। এ ছাড়াও, ভিন্ রাজ্যে সুদীপ্তর বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় ১৭টি সমন বকেয়া আছে।