বুধবার রাতে ফাঁকা বাড়িতে কার্টুন দেখতে দেখতে মৃত্যু হয়েছিল বছর ছয়েকের নিখিল বিশ্বাসের। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুর দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পুলিশ সূত্রে খবর, শিশুর পরিবারের দাবি ছিল, ফাঁকা বাড়িতে ডাকাতেরা ঢুকে লুটপাট চালানোর সময় শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। এর পর বৃহস্পতিবারই ঘটনার তদন্তে ওই শিশুর বাড়িতে যান সিপি। প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা ধরে বাড়ির লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিপি জানান, শিশুর শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন ছিল না। তা সত্ত্বেও পুলিশ ময়নাতদন্ত করিয়েছে। তার ভিডিয়োগ্রাফিও হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে খুনের প্রমাণ মেলেনি বলেই দাবি করেছেন সিপি। তাঁর কথায়, ‘‘ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে খুনের ইঙ্গিত মেলেনি। শিশুটিকে মারা হয়েছে, এমন কথাও বলা হয়নি প্রাথমিক রিপোর্টে। শিশুটির নিউরো সমস্যা ছিল। এই ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও তদন্ত প্রয়োজন। আমরা অন্য মতামতও নেব। ফ্লুইড ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে।’’
সিপির দাবি, শিশুর মৃত্যুর পর পরিবারের লোকেরা বাড়িতে ডাকাত পড়ার যে দাবি করেছিলেন, তারও সত্যতা মেলেনি। শিশুটির মা-ও বার বার নিজের বক্তব্য বদলাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সিপি। তাঁর কথায়, ‘‘উনি অভিযোগ করেছেন টাকা, গয়না চুরি গিয়েছে। পরে অন্য জায়গা থেকে ১০ হাজার টাকা খুঁজে পেয়েছেন। তা ছাড়া বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। ফলে ভিতরে কারও ঢোকাও সম্ভব না। বাবা-মা সন্তান হারিয়েছে। ওঁরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। শিশুটির মায়ের আগে থেকেই সমস্যা ছিল। আপাতত যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
চন্দননগরের কুন্ডুঘাট এলাকার বাসিন্দা নবকুমার বিশ্বাস ও তনুশ্রী বিশ্বাসের ছেলে নিখিল। নবকুমার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাম্প অপারেটর। পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার সকালে নবকুমার কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুরে নিখিলকে বাড়িতে রেখে কিছু ক্ষণের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন তনুশ্রী। বিকেলে বাড়ি ফিরেছিলেন মেয়ে (নিখিলের দিদি)-কে নিয়ে। ফিরে তাঁরা দেখেন, নিখিলের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা নিখিলকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার সকালেই শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি ডিডি সুমন চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময়েই নবকুমার এবং তনুশ্রী পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন যে, ডাকাতেরা বা়ড়িতে লুটপাট চালাতে এসে শিশুটিকে খুন করেছে। নবকুমার পরে প্রকাশ্যেও বলেছিলেন, “সকালে দেখি আলমারিতে চাবি ঝুলছে। স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করি সে আলমারি খুলেছিল কি না। স্ত্রী জানায়, সে আলমারি খোলেনি। লকারে চল্লিশ হাজার টাকা আর কিছু গয়না ছিল। সেগুলো পাইনি। মনে হচ্ছে বাড়িতে ডাকাত এসেছিল। তারাই আমার ছেলেকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে।” সিপি জানিয়েছেন, পরিবার যদি ডাকাতির লিখিত অভিযোগ দায়ের করে, তারও তদন্ত হবে।