এ নিয়ে শুধু ওই ঠিকানাতেই পাঁচ বার বেআইনি বাড়িটি ভাঙতে গেলেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। আগের চার বারও হেনস্থার মুখে বাড়ি না ভেঙেই ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁদের। পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, চারতলা ওই বেআইনি বাড়িটি ভাঙার জন্য আর তিন বার যাবেন তাঁরা। নীচের তিনটি তলই লোকজনের দখলে আছে। তাই পুরো বাড়ি আদৌ ভাঙা যাবে কিনা, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে তাঁরা।
এ শহরে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গেলে কখনও খোদ এলাকার পুরপ্রতিনিধি বাধা হয়ে দাঁড়ান, কখনও বা স্থানীয় মহিলারা এক জোট হয়ে হেনস্থা করেন পুর ইঞ্জিনিয়ারদের। পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশকর্মী সঙ্গে না থাকায় পিছু হটতে বাধ্য হন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা। ঠিক যেমন ঘটেছে এ দিন, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডে। বিল্ডিং বিভাগ সূত্রের খবর, ১৫ নম্বর বরোর পাশাপাশি ৩, ৭ ও ১২ নম্বর বরোতেও প্রচুর বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। সেই তুলনায় বাড়ি ভাঙা হচ্ছে সামান্যই। ২৮ জুন থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ১৫ নম্বর বরো এলাকায় বেআইনি নির্মাণের ১২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যদিও তার মধ্যে ভাঙা হয়েছে মাত্র ২৭টি। তিন নম্বর বরো এলাকায় ওই সময়ে বেআইনি নির্মাণের নোটিস দেওয়া হয়েছে ৮০টি। কিন্তু ভাঙা হয়েছে মাত্র ৩২টি। সাত নম্বর বরোয় ওই সময়ে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়েছে ৮৭টি। ভাঙা হয়েছে মাত্র ৪১টি। আবার ১২ নম্বর বরো এলাকায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে ৭০টি নোটিস দেওয়া হলেও ভাঙা হয়েছে মাত্র ২০টি।
গত কয়েক মাসে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। মাসকয়েক আগে চারু মার্কেট থানা এলাকায় বেআইনি বাড়ি ভাঙতে যাওয়ায় ওই বিভাগের এক মহিলা ইঞ্জিনিয়ারকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। এমনকি, অভিযোগ, বন্দুক নিয়ে এসে ভয় দেখানো হয় তাঁকে। তার পরে পুলিশ এসে কোনও মতে ওই মহিলা ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধার করে। আবার মাস দুয়েক আগে বেহালায় বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গেলে পুরকর্মীদের বাড়ির মধ্যে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেও পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে আনে। মাস তিনেক আগে এন্টালির একটি আবাসনে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে স্থানীয় মহিলারা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে নির্মাণ না ভেঙেই ফিরে আসতে হয় পুরকর্মীদের।
অবৈধ বাড়ি ভাঙতে গিয়ে এ ভাবেই পদে পদে বাধা পেতে হয় পুর ইঞ্জিনিয়ারদের। গত মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করার কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তবু সারা শহরে বেআইনি নির্মাণের বিরাম নেই। এক পুর ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ না থাকায় পিছু হটতে বাধ্য হই আমরা।’’
গার্ডেনরিচে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে পুরসভার শীর্ষ কর্তারা দাবি করেছেন, বেআইনি বাড়ি সংক্রান্ত অভিযোগ পেলেই পুরসভার তরফে কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আগের তুলনায় বেআইনি নির্মাণ নাকি অনেক কমেছে। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি বাড়ি নিয়ে নোটিস জমা পড়েছে ৫২৫টি। ভাঙা হয়েছে ২৬৪টি। এই তথ্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, পুরসভা কী কাজ করছে!’’ (শেষ)