বহরমপুরে সুস্থ সন্তান জন্ম দিলেন এইডস আক্রান্ত মা, আশার আলো দেখছেন অন্য রোগীরাও
প্রতিদিন | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর: গর্ভবতী অবস্থায় শহর থেকে খানিক দূরে এসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সোনিয়া (পরিবর্তিত নাম)। শুধু তিনি নন, তাঁর স্বামীও এইচআইভি পজিটিভ। একদিকে মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যুভয়। অন্যদিকে, গর্ভে থাকা সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে গিয়ে শুনলেন, দেশেই এখনও পর্যন্ত অনেক এইডস আক্রান্ত গর্ভবতী নারী সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সন্তানের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। এর পর চিকিৎসকদের নজরদারিতে বিশ্ব এইডস দিবসেই তাঁদের কোলে আসে ফুটফুটে ‘সুফল’ (পরিবর্তিত নাম)।
এই দম্পতির প্রথম সন্তান মেয়ে কিন্তু এইচআইভি নেগেটিভ। তার চেয়েও বড় কথা, এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলায় ১০-১২ জন দম্পতি যুগল এইডস আক্রান্ত, তাঁদের প্রত্যেকেরই সন্তান নেগেটিভ হয়েছে। সুফলের আড়াই কেজি ওজন কিন্তু হাসি ফুটিয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে। ফলে সুফলকে নিয়ে তাঁরা আশাবাদী। এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পজিটিভ নেটওয়ার্কের সেক্রেটারি পিন্টু শেখ বলেন, “গত ৩০ নভেম্বর ওই প্রসূতিকে বহরমপুরের মাতৃ মা বিভাগে ভর্তি করা হয়। এডস আক্রান্ত জানিয়েই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন ১ ডিসেম্বর ওই প্রসূতি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বিশ্ব এইডস দিবসের দিন ওই শিশু জন্মগ্রহণের বিশেষ উল্লেখযোগ্য।”
তবে এটাও ঠিক চার সপ্তাহ আগে জানা সম্ভব নয় ‘সুফলে’র ফল। পিন্টু শেখ জানান, শিশুটি জন্মানোর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। জীবাণুমুক্ত সিরাপ আগামী তিন মাস ধরে দেওয়া হবে ওই শিশুটিকে। আগামী ৬ মাস ধরে মায়ের দুধ ছাড়া ওই শিশুকে কিছু খাওয়ানো যাবে না। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ওই শিশুর ডিবিএস ব্লাড টেস্ট হবে। তার পরই জানা যাবে ওই শিশু নেগেটিভ না পজেটিভ। বিষয়টি ওই শিশুর মা-বাবাকেও জানানো হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েকটি সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দিতে পারে, হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে র?্যাশ দেখা দিতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেবে যখন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করাই এইচআইভির মূল বিপদ। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকলে কাশি, ডাইরিয়া, লিম্ফ নোড বা চামড়ার নিচে ফুলে যাওয়া গোটার মতো দেখা দেবে, ওজন কমে যাবে। তবে সুস্থ শিশু জন্মগ্রহণের কারণে জেলার অন্যান্য এইডস আক্রান্ত রোগীদেরও মুখে হাসি ফুটেছে।