• রাজ্যের দাবি আদায়ে মন্ত্রী চন্দ্রিমার নেতৃত্বে দিল্লি যেতে পারেন বিজেপি বিধায়কেরা, কথাও দিয়ে দিলেন শুভেন্দু
    আনন্দবাজার | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আনা প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যের দাবি আদায়ের জন্য বিজেপি বিধায়কেরা সরকারপক্ষের সঙ্গে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দরবারে যেতে পারেন। বিধানসভায় এমনই বলে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

    বৃহস্পতিবার বিধানসভায় কলকাতা থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক উড়ানের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে প্রস্তাব আনা হয় সরকারের পক্ষে। প্রস্তাবক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য ছিল, ‘‘কলকাতা থেকে ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশ এবং আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সরাসরি বিমান পরিষেবা নেই। ১৯২৪ সাল থেকে শুরু-হওয়া বিমান পরিষেবায় কলকাতা থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান ছিল। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই পরিষেবা আবার চালু করতেই এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।’’ ১৮৫ ধারায় আনা ওই প্রস্তাবের উপর বক্তৃতা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বিমান চালানোর জন্য যে অনুমতি প্রয়োজন তা কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারকে দিয়ে রেখেছে। তবে এ বিষয়ে রাজ্যের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মন্ত্রী কে আর নাইডু কিংবা দফতরের প্রতিমন্ত্রী মুরলীধর মোহলের কাছে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কোনও প্রতিনিধিদল গেলে সেই প্রতিনিধিদলে বিজেপি পরিষদীয় দলের এক বা একাধিক সদস্য শামিল হতে পারেন।’’

    বিরোধীদল সমর্থন জানানোয় তা দলমতনির্বিশেষে পাশ হয়ে যায় বিধানসভায়। প্রস্তাবক তথা মন্ত্রী চন্দ্রিমা বিবৃতি দিয়ে বিরোধী দলনেতাকে ধন্যবাদও জানান। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর প্রস্তাব উনি দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিনিধি দলে কে যাবেন, কে যাবেন না, তা ঠিক করেন লিডার অফ দ্য হাউস (মুখ্যমন্ত্রী)। যেহেতু বিরোধী দলনেতা এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন, তাই ধরে নেওয়া যায় প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমরা এর আগেও বলেছি যে, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে একসঙ্গে আমরা আবেদন জানাতে যেতেই পারি। যে সব টাকা আমাদের পাওনা আছে অথচ দেওয়া হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সহমত হননি। কিন্তু আমরা বাংলার ভালর জন্যই সেই কথা বলেছিলাম। এ সব ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতে পারে না। এই বিষয়ে (সরাসরি আন্তর্জাতিক উড়ান) যে তিনি (শুভেন্দু) একমত হয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে ভাল।’’

    সভার বাইরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা বাংলার মানুষের ২ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষের ভোট পেয়ে বিধানসভায় রাজ্যের মানুষের কথা বলতে এসেছি। এখানে যদি সরকারপক্ষ থেকে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কোনও সহযোগিতা চাওয়া হয়, তা হলে আমরা সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’ শুভেন্দু জানিয়েছেন, ‘‘বাংলা ভাগ নিয়ে রাজ্য সরকার যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, তাতে আমরা সংশোধনী দিয়েছিলাম। সেই সংশোধনী রাজ্য সরকার গ্রহণ করায় আমরা সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছিলাম। তাই এ ক্ষেত্রেও সমর্থন দিতে আমাদের আপত্তি নেই।’’

    প্রসঙ্গত, গত সোমবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাতেও কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বকেয়া আদায়ের বিষয়ে রাজ্যকে সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। তবে পাশাপাশি কিছু শর্তও দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে সব পক্ষকে জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের দাবি আদায়ের জন্য আবেদন করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রাখতে হবে। তবেই রাজ্য সরকারকে সমর্থন করবে বিজেপি পরিষদীয় দল। প্রসঙ্গত, চলতি বছর অগস্ট মাসের ৫ তারিখে বাংলা ভাগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সংশোধনী গ্রহণ করতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা ছিল গত সাড়ে তিন বছরের ইতিহাসে বিধানসভায় ‘নজিরবিহীন’ ঘটনা। সেদিনের পর আরও একবার একই পথে হাঁটতে দেখা গেল বাংলার শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপি বিধায়কদের।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)