বৃহস্পতিবার আদালতে পার্থের আইনজীবী দাবি করেন, মন্ত্রী হিসেবে তাঁর মক্কেল এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন। নিয়োগকাণ্ডে তাঁর কোনও ভূমিকাই ছিল না। গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। নিয়োগকাণ্ডে জড়িত সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গেও পার্থের কোনও যোগাযোগ নেই। এর পরেই পার্থের আইনজীবী বলেন, ‘‘ওঁর বয়স ৭৩ বছর। তার উপর অসুস্থও। যে কোনও শর্তে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।’’
অন্য দিকে, সিবিআইয়ের দাবি, নিয়োগকাণ্ডে ১৫২ জন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি। অথচ বিভিন্ন এজেন্ট মারফত টাকা তুলে ৭৫২ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর এই তালিকা পার্থ নিজেই পাঠিয়েছিলেন। সেই তালিকায় নাম থাকা ৭৫২ জনের মধ্যে ৩১০ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর চাকরি সুনিশ্চিত করা হয়। ফলে নিয়োগকাণ্ডের সঙ্গে পার্থের সরাসরি যোগ নেই, এই দাবি অমূলক। আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। সাক্ষীদের বয়ানও নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এখন পার্থকে জামিন দিলে তদন্তপ্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ওই মামলায় রায়দান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন পার্থও। পার্থ নিজেও আদালতে দাবি করেন, তিনি ‘নির্দোষ’। বরং উল্টে দোষ চাপিয়ে দেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ঘাড়ে! পার্থ জানান, তিনি কিছুই করেননি। যা করেছে বোর্ড করেছে। তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। তাঁর প্রশ্ন, এ ভাবে কত দিন তিনি আটকে থাকবন?
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই পার্থকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তার আগে তাঁর নাকতলার বাড়িতে চলেছিল দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটেও একই সময়ে হানা দিয়েছিল ইডি। গ্রেফতার হন অর্পিতা। ইডির পর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইও পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। দুই মামলাই এখনও বিচারাধীন। দুই মামলাতেই একাধিক বার জামিনের আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু আবেদন মঞ্জুর হয়নি। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে জামিন মামলার শুনানিতেও ভর্ৎসিত হতে হয়েছে পার্থকে। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পার্থ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, তবে তাঁর এ ভাবে জামিন পাওয়া উচিত নয়। পার্থের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে দুই বিচারপতি বলেন, “এই মামলায় বাকিরা জামিন পেতেই পারেন। তাঁরা তো কেউ মন্ত্রী নন। আপনার মক্কেল মন্ত্রী ছিলেন। তিনি যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, সমাজকে আমরা কী বার্তা দেব? একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি কি এ ভাবে জামিন পেতে পারেন?”