নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ছেলে শিক্ষক, মেয়ে নার্স। তবু মাসে লাখ টাকার লোভে চোলাই কারবারে জড়িয়ে আবগারি দপ্তরের হাতে ধরা পড়লেন হাফিজুল আলম ওরফে মুন্না। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার রাধাকান্তপুর গ্রামের সুন্দরপুরে। কোলাঘাট ব্লকের যশোড়া থেকে খন্যাডিহি রাস্তার মাঝে একটি বাইকে চোলাই সাপ্লাই করার সময় তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে আবগারি দপ্তর। ধরা পড়ার পর নিজের বংশমর্যাদার প্রসঙ্গ টেনে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেছিল হাফিজুল। কিন্তু, সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ১ডিসেম্বর কোলাঘাটে হাফিজুলের গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় হইচই পড়ে গিয়েছে।
আবগারি দপ্তর এবং পুলিসের সাঁড়াশি চাপে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় চোলাই উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে। যদিও এই জেলায় চোলাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর, পিংলা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এই জেলায় চোলাই আসছে। গত তিন মাসে কোলাঘাট আবগারি দপ্তরের হাতে এরকম ৩৫জন ধরা পড়েছে। তারা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে চোলাই কোলাঘাট ও পাঁশকুড়ায় সাপ্লাই করতে গিয়ে শ্রীঘরে গিয়েছে। দাসপুর থানার অন্তর্গত রাধাকান্তপুরের সুন্দরপুর চোলাই-গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের বহু পরিবারের পেশা চোলাই উৎপাদন। শুধু উৎপাদন নয়, এখানকার অনেকে চোলাইয়ে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। চোলাই খেয়ে ৩০-৪০বছরের মধ্যে ৬০জনের বেশি যুবক মারা গিয়েছে। ওই গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তাপস বসু বলেন, সুন্দরপুরের রাজাপুরে চোলাই খেয়ে অনেকেই অল্পবয়সে মারা গিয়েছে। ৪০বছরের আগেই বহু বাড়িতে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ৮০শতাংশ বাড়িতে মহিলারা বিধবা হয়েছেন। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার।
দাসপুর থানার সুন্দরপুর গ্রামে চোলাই তৈরি হওয়ার পর তার অনেকটা সাপ্লাই হয় পূর্ব মেদিনীপুরে। চোলাই তৈরি হওয়ার পর ক্যারিয়াররা সংগ্রহ করে। তাতে প্রবল ঝাঁঝ থাকায় অর্ধেক জল মিশিয়ে মুনাফা দ্বিগুণ করে নেয় ক্যারিয়াররা। তারপর বাইকে বেঁধে দুই মেদিনীপুরের সীমানা পার করতে পারলেই কেল্লাফতে। কাজ হাসিল হলেই মোটা টাকা আয়। ধৃত হাফিজুল দিনে তিন থেকে চারবার দাসপুর থেকে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটে চোলাই সাপ্লাই করত বলে কোলাঘাটের ওসি এক্সাইজ জানান। এভাবে প্রতিদিন তার তিন-চার হাজার টাকা নিশ্চত আয় ছিল।
ধৃত হাফিজুলের বাবা সফিকুল আলম স্থানীয় টালিভাটা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাছাড়া তিনি সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যও ছিলেন। এলাকায় তাঁর বেশ নামযশ ছিল। এখন তিনি বেঁচে নেই। তিনতলা প্রাসাদের মতো বাড়ি। সামনে চারচাকা গাড়ি লেগে থাকে। হাফিজুল ওরফে মুন্নার মেয়ে দিল্লিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন। ছেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ পাশ করার পর মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য একটি নামী গাইডেন্স সংস্থার অধীনে শিক্ষকতা করেন। মাসে মোটা মাইনে। এরকম এক নামজাদা পরিবারের গৃহকর্তা ৫৪বছর বয়সি হাফিজুল আলম মাসে লাখ টাকার লোভের চোলাই কারবারে হাত পাকিয়েছিল।
১ডিসেম্বর রাত ১১টা নাগাদ আবগারি দপ্তরের কোলাঘাট ওসি রাহুল দাসের নেতৃত্বে টিম ৫০লিটার চোলাই সহ তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করেছে। তার মোটর বাইকও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আবগারি দপ্তরের পূর্ব মেদিনীপুরের সুপার মণীশ শর্মা বলেন, টাকার লোভে মানুষ কত নীচে নামতে পারে হাফিজুলদের দেখলে সেটা বোঝা যায়।