• ভোজ্য তেল কারখানার দূষিত রাসায়নিকের জলে দূষণ, সমস্যা সমাধানে দ্রুত রূপরেখা তৈরির নির্দেশ হলদিয়া পুরসভার প্রশাসকের
    বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: ভোজ্য তেল কারখানার দূষিত রাসায়নিকের জলে জেরবার বাসিন্দারা। এই অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার শিল্প সংস্থাগুলিকে নিয়ে মিটিং করলেন হলদিয়ার পুর প্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়। মিটিংয়ে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(এইচডিএ), রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম(ডব্লুবিআইডিসি), দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়াররা উপস্থিত ছিলেন। এবিষয়ে দূষণ পর্ষদ ও ডব্লুবিআইডিসির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পুর প্রশাসক। তিনি এদিন দুই সংস্থার আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের গাছাড়া মনোভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কীভাবে ক্যানেল কেটে কারখানার জমা জল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যানেলে ফেলা যায়, দ্রুত তার রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মিটিংয়ের পর বিকেল ৫টা নাগাদ সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখেন আধিকারিকরা। 


    বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি সেন্টার এলাকার ভোজ্যতেল সংস্থার বর্জ্য রাসায়নিক জল থেকে ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে। নিকাশির অভাবে ওই কারখানাগুলির বর্জ্য নিচু এলাকায় জমে যায়। ফলে জমা জলের দুর্গন্ধে চিরঞ্জীবপুর এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। শিল্প এলাকার অন্যতম সড়ক এইচপিএল লিঙ্ক রোড দিয়ে যাতায়াত করলেই কটু গন্ধে যাত্রীদের মাথা ঘোরে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই জমা জল ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দেভোগ, গেঁওডাব, শোভারামপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার পুকুর, ধানজমি, সব্জিখেতে ওই জল ঢুকে মাছ থেকে সমস্ত ফলন নষ্ট করে দিচ্ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বলেন, কারখানার দূষিত বর্জ্য জল নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইদানীং ক্যালস রিফাইনারি মাঠের চারপাশে প্রাচীর উঠতে থাকায় সমস্ত নিকাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আটতলা শান্তিনিকেতন ক্লাব সংলগ্ন একটি কালভার্টও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিকাশি না থাকায় ঘুরপথে ওই জল উপচে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ছে। বর্ষার সময় এলাকার বাসিন্দারা এইচপিএল লিঙ্ক রোড অবরোধ করে দুর্ভোগের প্রতিবাদ করেন। পুরসভাকে তাঁরা একাধিক চিঠি দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, দূষিত রাসায়নিক বর্জ্য জল বাইরে ছাড়ার অভিযোগে ওই ভোজ্যতেল সংস্থাগুলিকে আর্থিক জরিমানাও করেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি শিল্প সংস্থাগুলির। এদিন মহকুমা শাসক তথা পুর প্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় এধরনের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও সিনিয়র আধিকারিক না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দূষণ নেই বলে পাশ কাটিয়ে গেলে হবে না। ভুক্তভোগী মানুষের কথা ভাবতে হবে সবাইকে। জানা গিয়েছে, ক্যালসের মাঠে গত দু’তিন মাস ধরে ডব্লুবিআইডিসি প্রাচীর তোলার কাজ করছে। ওই প্রাচীরের জন্য সব নিকাশি আটকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। 


    এদিন, মিটিংয়ে এইচডিএর ইঞ্জিনিয়ারও কোনও কথা বলেননি। পুর প্রশাসক বলেন, জমা জল নিকাশির জন্য আদানির নতুন কারখানার কাছ থেকে দু’টি ক্যানেল কাটার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেগুলি এইচপিএলের মনসাতলা ক্যানেলে যুক্ত হবে। প্রায় দেড় দশক ধরে এই পরিকল্পনা চলছে। এখন দ্রুত সেকাজ করে বাসিন্দাদের রক্ষা করতে হবে। ভোজ্যতেল সংস্থাগুলি ক্যানেল খননের অর্থ দেবে এবং পুরসভাও সাহায্য করবে। 


    পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে জমির লে আউট ধরে কোন এলাকায় ক্যানেল কাটা হবে, তার সার্ভে করবে। প্রায় তিন কিলোমিটার ক্যানেল খনন করা হবে বলে জানা গিয়েছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)