• সরকারি দল সমীক্ষা করে যাওয়ায় পাকা ঘরে থাকার আশা আরও বাড়ল শতায়ু ছফিরউদ্দিনের
    বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • মনসুর হাবিবুল্লাহ, দিনহাটা: শতায়ু পেরিয়েছেন ভাঙা ঘরে। ঘর বলতে, মাথার উপর আচ্ছাদন কালো পলিথিনে। ঠান্ডা আটকাতে সেই পলিথিনের উপর রাখা হয়েছে কিছু খড়। ঘরের বেড়াজুড়ে অসংখ্য ছিদ্র। সেই দিয়েই ভোরের আলো প্রবেশ করে ঘরে। বর্ষাকালে জল ঢোকে। আর শীতকালে শিশিরে ভেজে বিছানা। দিনহাটা-২ ব্লকের নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তুতিয়ারকুটি গ্রামে এমন ঘরেই থাকেন ছফিরউদ্দিন মিয়াঁ। বয়স ১০৮ বছর। 


    শত আয়ু পেরনো এই বৃদ্ধের নিজের একটা ভালো বাড়ি বানানোর স্বপ্ন ছিল। কর্মক্ষমতা হারিয়ে গেলেও আশা পূরণ হয়নি। কোনওমতেই দিন গুজরান করছেন তিনি। স্ত্রী মারা যাওয়ার কয়েক বছর হয়েছে। ছেলে, বউমা আর এক নাতনিকে নিয়ে সংসার। পরিবারের সম্বল বলতে ভিটেমাটিটাই। সংসার চালাতে ছেলে অন্যত্র কাজ করে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো এই সংসারে ঘর বানানো শুধু স্বপ্নেই সম্ভব। তবে আশা পেয়েছেন বারবারই। 


    ২০১৮ সালে সার্ভের সময় ঘরের তালিকায় নাম ওঠে তাঁর। ২০২২ সালে সেই তালিকা পুনরায় যাচাই করে রাজ্য সরকার। প্রতিটি তালিকায় ঘরের জন্য নাম ছিল ছফিরউদ্দিন মিয়াঁর। দীর্ঘ আশায় বসেছিলেন ঘর পাবেন। কেন্দ্রের গড়িমসিতে আটকে রয়েছে টাকা। এবারে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে গরিব মানুষকে ঘরের টাকা দেওয়ার বিষয়। সেই অনুযায়ী সার্ভের কাজ চলছে। 


    বৃহস্পতিবার ছিল সেই সার্ভের শেষ দিন। এদিনই এই বৃদ্ধের বাড়িতে হাজির হয় সার্ভের টিম। অসহায় মানুষটির ঘরের সার্ভে সম্পন্ন করে প্রশাসন। ১০৮ বছরের বৃদ্ধের বাড়ির করুণ অবস্থা ঘুচতে পারে এবার। পাকা ঘরে শান্তিমতো ঘুমাতে পারবেন তিনি। সরকারি টিম সার্ভে করার পরে আশা আরও বেড়েছে তাঁর। মৃত্যুর আগে ক’টাদিন তো শিশিরকণা ঢুকবে না। ভাঙা বেড়া দিয়ে ঠান্ডা বাতাস রাতের বেলা আর বেশি শীত বাড়াবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। 


    ছফিরউদ্দিন মিয়াঁ বলেন, আর ক’টা দিনইবা বাঁচব। পাকা ঘরের স্বপ্নপূরণ হবে ভাবতেই পারছি না। বারবার আবাসের তালিকায় নাম উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয়নি বলেই ঘর বানাতে পারিনি। মুখ্যমন্ত্রী এবার উদ্যোগ নিয়েছেন। মরার আগে আরাম করে ক’টা দিন পাকা ঘরে কাটাতে পারব হয়তো।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)