• আর জি কর-কাণ্ডে বিচার পেতে ফের পথে মা-বাবা
    আনন্দবাজার | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • আর জি কর-কাণ্ডের পরে কেটেছে ১১৯ দিন। এখনও ন্যায়বিচার অধরা। তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে, বিচার কবে মিলবে— তা নিয়েও সন্দিহান নির্যাতিতার বাবা-মা। অথচ ঘটনার পরে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে শুরু হওয়া আন্দোলন স্তিমিত হতে প্রশাসনও পুরনো চেহারায় ফিরেছে। বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ তুলে ফের প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন বলে জানালেন আর জি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতা চিকিৎসক-ছাত্রীর মা-বাবা। তাঁরা বলছেন, ‘‘রাস্তাতেই থাকতে হবে। আন্দোলন না থাকলে হয়তো বিচার পাব না।’’ আজ, শুক্রবার জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের ডাকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলেও যোগ দেবেন তাঁরা।

    গত ৯ অগস্ট আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সেই সময়ে যাঁরা পরিবারের পাশে ছিলেন, এখন তাঁরাও আর খোঁজ নেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে নির্যাতিতার পরিবার। তাই বিচারের দাবিতে সমাজমাধ্যমে পেজ তৈরি করে তাতে ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। পাশাপাশি, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কলকাতা সফরের সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ইমেল করা হলেও তিনি দেখা করেননি। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘আর জি কর নিয়ে ওঁরা কেউ মুখও খুলছেন না। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার কয়েক বার আমাদের সঙ্গে দেখা করলেও কিছুই হয়নি।’’ ন্যায়বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি পাঠালেও তারও উত্তর মেলেনি বলে দাবি। তাই সংসদে অধিবেশন চলাকালীন দিল্লি গিয়ে দেখা করার প্রচেষ্টার কথাও জানান নির্যাতিতার মা-বাবা। দিনকয়েক আগে বিধানসভায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ও আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।

    এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র তথা দলের রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একমাত্র সন্তানকে হারানো বাবা-মায়ের যে আকুতি বিচারের জন্য, তাকে কোনও ভাবে আঘাত করার অভিপ্রায় আমাদের নেই। কেন্দ্র বিষয়টি নজরে রেখেছে, বিজেপি-ও এ নিয়ে সরব। সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার আগেই পুলিশকে দিয়ে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করানো হয়েছিল। সিবিআইয়ের কাজ কঠিন, তবু তারা সত্য উদ্ঘাটন করতে পারবে বলেই আশাবাদী। মনে রাখতে হবে, সুবিচার পেতে তাড়াহুড়ো করলেও সেই সুবিচারের মৃত্যু ঘটে।’’

    ঘটনার দিন আর জি করের সেমিনার-কক্ষে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে মেডিক্যাল কাউন্সিলে ফেরানোর চেষ্টারও প্রতিবাদ করেছে নির্যাতিতার পরিবার। তাঁদের কথায়, ‘‘যাঁদের সেমিনার-কক্ষে দেখা গেল, তাঁরাই ফের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাথায় বসছেন। হুমকি প্রথা ফিরে আসছে। আমাদের ধারণা, মেয়েও হুমকি প্রথার শিকার।’’ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখেও তাঁরা বলছেন, ‘‘আমাদের মেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছিল। সেখানেই ঘটনাটি ঘটেছে। সিবিআই তদন্ত করলেও রাজ্য এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।’’ কেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চার্জশিটে রাজ্য সম্মতি দিচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ, ‘‘এখনও সন্দীপকে সাসপেন্ড করা হয়নি। তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের মাথায় প্রশাসনের হাত আছে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)