লালবাজার জানিয়েছে, ধৃতের নাম রাজীব ঘোষ ওরফে গোবরা। সে আদতে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা। শ্যামবাজারের কাছে দিনমজুরের কাজ করত। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে চিহ্নিত করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজীবকে আদালতে তোলা হয়। তাকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা নগর দায়রা আদালতের বিশেষ পকসো কোর্টের বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র। রাজীবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপহরণ এবং পকসো আইনের ছ’নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন ধৃতের ডিএনএ পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, শনাক্তকরণ প্যারেড এবং মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার আর্জি জানান সরকারি আইনজীবী। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতের মা অঞ্জলি ঘোষের দাবি, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে রোজগারের জন্য কলকাতায় গিয়েছিল ছেলে। কী ভাবে কী ঘটেছে, কিছুই জানি না।’’
এ দিন বিচার ভবনের মুখ্য সরকারি আইনজীবী দীপঙ্কর কুণ্ডু এবং বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সৈকত পাণ্ডে জানান, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নতুন আইন অনুযায়ী, অভিযুক্তকে জেল হেফাজতে নিয়ে শনাক্তকরণ প্যারেড, মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা করানো সুবিধাজনক। প্রয়োজনে পরে তাকে ফের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করা যেতে পারে। সেই কারণে রাজীবকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানানো হয়। আপাতত নির্যাতিতা শিশুটির চিকিৎসা চলছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার দুপুরে বড়তলা থানা এলাকার এক বাসিন্দা নিজের বাড়ির সামনের ফুটপাতে সাত মাসের ওই শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। শিশুটির গোপনাঙ্গ-সহ শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই বাসিন্দাই প্রথমে বড়তলা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে শিশুটিকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করার পাশাপাশি তার পরিবারের খোঁজ শুরু করে।
শিশুটির উপরে যে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, বড়তলা থানা এলাকাতেই ফুটপাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে সে। শুক্রবার রাতে শিশুটি উধাও হয়ে যায়। পরে শনিবার তাকে পাওয়া যায়। তদন্তে নেমে শিশুটি যেখানে থাকে এবং যেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়, দুই জায়গারই আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। কারণ, ঠিক ওই দুই ঘটনাস্থলে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই। তবে, আশপাশের সিসি ক্যামেরায় সন্দেহজনক ভাবে রাজীবকে বেশ কয়েক বার ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। সেই সূত্র ধরে তার খোঁজ শুরু করে পুলিশ।
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে যাতে কোনও ভাবেই ধরা না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই ঘটনাস্থলে একাধিক বার ঘুরে গিয়েছিল অভিযুক্ত। ঘুমন্ত শিশুটিকে তুলে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’