শুধু সাধারণ মানুষই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও এক গুচ্ছ দাবি জানাতে চলেছে মঞ্চ। আগেই বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ চেয়েছেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। এ বার মঞ্চের দাবি, সব রকম বাংলাদেশি পণ্য আমদানি ও বিক্রয় বন্ধ করা হোক। ওই দেশে তুলো-সহ অন্যান্য সামগ্রীর রফতানি বন্ধ রাখা হোক। মঞ্চের লক্ষ্য, বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ করা। এমনকি, সাময়িক ভাবে হলেও বাংলাদেশিদের ভারতে চিকিৎসার ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা হোক বলে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাতে চায় মঞ্চ।
দেশব্যাপী বয়কট আন্দোলন করতে চাইলেও তা শুরু হবে বাংলা থেকেই। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলনের জন্য সব চেয়ে ভাল ‘জমি’ এ রাজ্য বলেই মনে করেন মঞ্চের নেতারা। বাংলা, ওড়িশা এবং সিকিম নিয়ে মঞ্চের সাংগঠনিক পূর্ব ক্ষেত্রের নেতা অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, ‘‘ইতিহাস জানে, যত বার বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলায়। আর এখন সেখানে যে ভাবে হিন্দুদের উপরে নির্যাতন চলছে, তাতে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে আগে প্রতিবাদ করা উচিত। আমরা সেই কারণেই চাই, বাংলায় বাংলাদেশের যাবতীয় সামগ্রী বয়কট করা হোক।’’
আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা দত্তপন্থ ঠেংরি ১৯৯১ সালে শুরু করেন ‘স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ’। সঙ্গে ছিলেন পরবর্তী কালে সঙ্ঘের প্রধান (সরসঙ্ঘচালক) কেএস সুদর্শন। প্রথম থেকেই এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল ভারতে উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহারে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। একই সঙ্গে কেন্দ্রের সরকারকে স্বদেশিনীতি গ্রহণে বাধ্য করা। সঙ্ঘের সেই লক্ষ্য মেনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতি নেন। এর পরেও মঞ্চ যে মোদী সরকারের উপরে খুশি তেমন নয়। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র সক্রিয় হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে মঞ্চ। এ ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বিক্রি, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কেন্দ্রের নীতির বিরোধিতা করে এই মঞ্চ।
কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময়ে দেশ জুড়ে স্বদেশি সামগ্রী ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পথে নামা মঞ্চ অবশ্য দীর্ঘ দিন সে ভাবে কোনও বড় কর্মসূচি নেয়নি। বাংলাদেশে ‘অস্থিরতা’ শুরু হওয়ার পরে গত অগস্ট মাস থেকেই পণ্য বয়কটের কথা বলেছে মঞ্চ। এ বার তা নিয়ে পথে নামার প্রস্তুতি। খুব তাড়াতাড়ি ঘোষিত ভাবে সেই কর্মসূচি শুরু হবে। অম্লানকুসুম বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত রকম বিদেশি পণ্য বয়কটের কথা বলি। শুধু স্বদেশি পণ্য গ্রহণের কথা বলি। নিজেরাও তা মেনে চলি। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সাধারণ মানুষের কাছেও অনুরোধ, তাঁরা যেন বাংলাদেশের পণ্য সবচেয়ে আগে বয়কট করেন। বাংলাদেশ এখন ভারত বিরোধিতার ভূমি হয়ে উঠেছে।’’
সাধারণ মানুষের কাছে মঞ্চের আর্জি, কেউ যেন বাংলাদেশের পণ্য না কেনেন। প্রতিবেশী এবং স্থানীয় বিক্রেতাদের সেই সব পণ্য দোকানে না রাখতেও বলেন। শুধু পণ্যই নয়, বাংলাদেশের সিনেমা, নাটক, ওয়েব সিরিজ় দেখা থেকে বিরত থাকতেও আবেদন জানানো হবে। ইউটিউবে বাংলাদেশের চ্যানেল বয়কট করার পাশাপাশি কেউ যেন ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ কাজ না দেন, সেই প্রচারও চালাতে চায় মঞ্চ। বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের পাশাপাশি সে দেশের জিআই ট্যাগ রয়েছে এমন পণ্য, যেমন, ঢাকাই মসলিন, জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি, কাটারিভোগ বা কালিজিরা চাল, শীতলপাটি, নকশিকাঁথা, বিভিন্ন ধরনের আম, এমনকি, পদ্মার ইলিশের উপরেও বয়কট চায় মঞ্চ। ইতিমধ্যে সেই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।