প্রথম পর্যায়ে প্রেসিডেন্সি, বর্ধমান, বাঁকুড়া, কল্যাণী, সিধু-কানহো-বিরসা এবং রানি রাসমণি গ্রিন বিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্যের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য করা হয়েছে নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তীকে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে শঙ্করকুমার নাথ, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপকুমার বর্মণ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে কল্লোল পাল, সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্রকুমার চক্রবর্তী এবং রানি রাসমণি গ্রিন বিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছে অমিয়কুমার পণ্ডাকে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ‘জট’ কাটার পরই রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি বিষয়টি জানান। নতুন উপাচার্যদের শুভেচ্ছাও জানান তিনি।
রাজ্যের ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে নবান্ন এবং রাজভবনের সংঘাত চরমে উঠেছিল। সেই সংঘাতের জেরে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্থায়ী উপাচার্য পদ ফাঁকা। আচার্য তথা রাজ্যপালের ঠিক করে দেওয়া অস্থায়ী উপাচার্যেরাই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে নবান্ন বনাম রাজ্যপালের বিবাদের নিষ্পত্তি করতে গত ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে ‘সার্চ-কাম-সিলেকশন’ কমিটি তৈরি করে দিয়েছিল।
শীর্ষ আদালত বলেছিল, এই কমিটি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনটি নাম বাছাই করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে। নামের অদ্যাক্ষরের ভিত্তিতে তালিকায় তিনটি নাম থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী তিন জনের মধ্যে পছন্দের ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করবেন। সেই নামের তালিকা থেকেই এক জনকে বেছে নেবেন রাজ্যপাল। তবে তা নিয়ে শীর্য আদালতে আপত্তি তোলেন বোস। সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে জানায়, রাজ্যপালের আর্জি খারিজ করা হচ্ছে না। পরে প্রয়োজন মতো তা শোনা হবে। আপাতত আগের নির্দেশ মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলুক।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। চলতি বছরের ২৬ জুলাই থেকে ২৩ অগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। তার পর দু’দফায় চলে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া। সেখান থেকেই উপাচার্য পদপ্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সেই তালিকা থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিন জনের নাম বেছে রাজভবনকে পাঠায় নবান্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে এর আগে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে নবান্নের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় রাজভবন। আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের বিরোধ শুরু হয়েছিল আগেই। তার পরে নারী নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে সেই বিরোধ চূড়ান্ত তিক্ত হয়ে ওঠে। প্রকাশ্যেই রাজ্যপাল সম্পর্কে সেই গুরুতর অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১৫ অগস্ট প্রথা মেনে রাজভবনের চা চক্রে যান মমতা। তখন রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।
তবে গত সোমবার তৃণমূলের ছয় বিধায়কের শপথ পাঠ করাতে রাজ্যপাল বিধানসভায় আসতে রাজি হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। কথা না-হলেও নিয়মমাফিক স্বাগত জানাতে রাজ্যপাল বোসের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই আবহেই এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল। বিধায়কদের শপথগ্রহণ, পরে মমতার পছন্দে সায় দিয়ে উপাচার্য নিয়োগকে রাজ্য-রাজভবনের মধ্যে সম্পর্কের ‘উন্নতি’ হিসাবেই দেখছেন অনেকে।