নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জয়নগর কাণ্ডে ছাত্রী খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রথমবার ‘গেট প্যাটার্ন’ পদ্ধতি ব্যবহার করে সাফল্য পেল রাজ্য পুলিস। অভিযুক্ত মুস্তাকিন যে এই অপরাধে জড়িত, এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করানো এই পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়। আগামী দিনে এহেন জঘন্য অপরাধের ঘটনার তদন্তে গেট প্যাটার্নকে অনুসরণ করে এগতে চান তদন্তকারীরা। কী এই গেট প্যাটার্ন? ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন অভিযুক্তের শরীরি ভাষা এবং হাঁটাচলার ধরণের পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষণ করা হয় এই পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতি আইনস্বীকৃত।
আর জি করে অভয়া ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও বিচার পাননি ওই ছাত্রীর পরিবার। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় খুন ও ধর্ষণে জড়িত তা জানতে সিবিআইয়ের সময় লাগে দু’মাস। একের পর এক পরীক্ষা করলেও, কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসাররা জানতেনই না গেট প্যাটার্ন টেস্ট করালেই সব কিছুই বেরিয়ে আসবে। আর এখানেই রাজ্য পুলিসের অফিসাররা দেখিয়ে দিলেন, তদন্ত কীভাবে করতে হয়! অনেকেই বলছেন, এই পাঠ রাজ্য পুলিসের কাছ থেকে নিতেই পারে কেন্দ্রের ‘এলিট’ এজেন্সি।
৪ অক্টোবর কুলতলিতে স্কুল ছাত্রীর খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পর উত্তাল হয়েছিল এলাকা। অভিযুক্ত মুস্তাকিন ধরা পড়ার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, আরও অনেকেই জড়িত আছে। কিন্তু তদন্তকারীরা প্রথম থেকেই তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে আদালতের কাছে প্রমাণ করে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, মুস্তাকিনই অভিযুক্ত। অভিযুক্তের টাওয়ার লোকেশন যে ঘটনাস্থলেই ছিল, তা প্রমাণ করতে গুগল ম্যাপিংয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। দেখা যায় ওই জায়গাতেই রয়েছে মুস্তাকিনের উপস্থিতি। ছাত্রীর কাদা মাখা ব্যাগ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে কাদার নমুনা সংগ্রহ করেন অফিসাররা। ব্যাগে লেগে থাকা কাদা ও সংগৃহীত নমুনা পাঠানো হয় ফরেন্সিক টেস্টে। দেখা যায় একই কাদা রয়েছে। কিন্তু তদন্তকারীরা আরও নিখুঁত হতে চাইছিলেন। যাতে আদালতের সামনে তুলে ধরা হয় মুস্তাকিনই গোটা ঘটনা ঘটিয়েছে।
তদন্তকারীদের মাথায় আসে, প্রতিটি ব্যক্তির চলনবলনে পার্থক্য রয়েছে। এমনকী শরীরি ভাষা প্রকাশ করার ভঙ্গিমাও আলাদা হয়। সেটি আরও নির্দিষ্ট করা যায় ‘গেট প্যাটার্ন’ পদ্ধতির মাধ্যমে। তদন্তকারীরা তিনটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পান। একটিতে অভিযুক্তকে সাইকেলে উঠতে দেখা যায়, অন্যটি ছিল সে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। আর একটি ছিল সে ওই কিশোরীকে অনুসরণ করছে। কিন্তু ওটি যে মুস্তাকিনই, তা প্রমাণ করতে সংশোধনাগারে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যান তদন্তকারীরা। সঙ্গে ছিল বাজেয়াপ্ত করা সাইকেল। সংশোধনাগার চত্বরে তাকে সাইকেল উঠতে বলা হয়। এরপর মুস্তাকিনকে সাইকেল চালাতে বলেন তদন্তকারীরা। সামনে একজন ব্যক্তিকে রেখে মুস্তাকিনকে বলা হয় তাঁকে অনুসরণ করতে। গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেন তদন্তকারী অফিসাররা। তার হাঁটার ভঙ্গিমাও দেখা হয়।
সিসি ক্যামেরার ছবি ও সংশোধনাগারে তোলা ভিডিও বিশ্লেষণ করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন, হাঁটার ভঙ্গিমা একই। অর্থাৎ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বন্দি ব্যক্তিই যে মুস্তাকিন, তাতে নিশ্চিত হন অফিসাররা। আদালতে সে নথি তুলে ধরেন তাঁরা। যা দেখে আদালতও নিশ্চিত হয়, মুস্তাকিনই ঘটনাস্থলে ছিল।