নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: আমন ধান পেকে গিয়ে ক্ষেত এখন হলুদ। ফসল ঘরে তোলার পালা। কিন্তু তার আগে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকদের অনেকেই। কারণ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন গ্রামে এবার ধানের ভুসাকালি রোগের প্রকোপ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে এই রোগের প্রভাব সেভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু এবছর বহু কৃষকের জমিতেই ধানে এই রোগ ধরা পড়েছে। সুরাহা পেতে সোনারপুরের আড়াপাঁচে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের কাছে ছুটে আসছেন অনেকেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এ বছর তো বটেই, আগামী মরশুমেও সমস্যায় পড়তে পারেন কৃষকরা। কারণ এতে ফলনের ক্ষতির পাশাপাশি বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা অনেক কমে যায়, জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা।
এই রোগের উপসর্গ কী? কৃষকদের ভাষায়, একে লক্ষ্মীর মল বলে। অনেকে ভুসাকালি রোগও বলেন। বিজ্ঞানের ভাষায় ফলস স্মাট রোগ। ধানের শিসের গোঁড়ায় প্রথমে কমলা-হলুদ এবং পরবর্তীতে কালো রঙের ছোট বলের (স্মাট বল) আকারে পাউডারের মত দ্রব্য জমাট বেঁধে থাকে। হাওয়া দিলে সেটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বীজ শোধন না করে চাষ করলে এই রোগ বেশি হয় বলে জানিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের শস্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এবারে এই রোগ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বেশি করে দেখা দিয়েছে। এটা ধানের গুণগত মান খারাপ করে দেয়। ধানের ওজন কমিয়ে কৃষকের বড়সড় লোকসান ডেকে আনতে পারে।
এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় হল, আগামী মরশুমে চাষ করার আগে কৃষকদের জমি ফের পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ ও সার দিয়ে এই রোগ নির্মূল করতে হবে। কেন এবারে এই রোগের প্রকোপ বেশি? কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানী অভিজিৎ ঘোষাল বলেন, এই রোগ সাধারণত ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতায় বেশি হয়। শীতকাল এসে গেলেও এই বছর ঠান্ডা সেরকম নেই। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের কারণে এবং সঙ্গে সঠিক পরিচর্যার অভাবে এই রোগ জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে ধানগাছে। আক্রান্ত জমিতে প্রতি লিটার জলে চার গ্রাম কোসাইড মিশিয়ে স্প্রে করলে এই রোগের প্রকোপ কমে যায়।