সিনিয়র চিকিত্সকরা উপস্থিত না থাকলে অপারেশন করতে পারবেন না পিজিটিরা
বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান। তাই এককভাবে কোনও পিজিটি বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করতে পারবেন না। শিক্ষক চিকিৎসকদের উপস্থিতিতেই করতে হবে রোগীর অস্ত্রোপচার। শনিবার রাজ্যের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ এবং অধ্যক্ষদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই কড়া বার্তা জানিয়ে দিল স্বাস্থ্যদপ্তর। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের সিদ্ধান্তেই এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে দপ্তর সূত্রে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক শীর্ষকর্তার পাঠানো ওই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় অধ্যক্ষদের বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগান, যাতে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, অপারেশন থিয়েটারে ঠিক কারা কারা ঢুকছেন।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে এই কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে। এর একাধিক কারণও আছে। বহু মর্মান্তিক মৃত্যুর ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে অপারেশনের ঘটনায়।
মাসকয়েক আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি মৃত্যুর অডিট করতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, আশ্চর্যজনকভাবে রাতের দিকে প্রসব বেড়ে গিয়েছে। এও দেখা গিয়েছে, সেই সব সময় ওটিতে কোনও সিনিয়র চিকিৎসকই ছিলেন না। ছিলেন শুধুমাত্র শিক্ষার্থী চিকিৎসক বা পিজিটিরা। কিছুদিন আগে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে হওয়া এক প্রসূতি মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়েও দেখা যায়, তৃতীয় বর্ষের এক পিজিটি অপারেশন করেছিলেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের সাফ কথা, পিজিটি অপারেশন করতেই পারেন বা অংশ নিতেই পারেন সাহায্যকারী হিসেবে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সেদিন ওটিতে কোনও সিনিয়র চিকিৎসকই উপস্থিত ছিলেন না। নাম কা ওয়াস্তে ইউনিট ইনচার্জের অধীনে অপারেশন হয়েছে। মর্মান্তিক মৃত্যু হয় বছর তিরিশের ওই প্রসূতির।
খোঁজখবর নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা দেখেছেন, এতে শুধুমাত্র পিজিটিদের উপর খড়্গহস্ত হওয়াটা অযৌক্তিক। কারণ, বিকেল হওয়ার আগে থেকেই অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত একাধিক বিভাগের বহু সিনিয়র সার্জনকে আর হাসপাতালে দেখাই যায় না। তাঁরা নিজ নিজ চেম্বার এবং প্রাইভেটে ‘কেস’ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রোগী সামলানোর গুরুদায়িত্ব দিয়ে যান নিজের ‘প্রিয়’ বা ‘অতিবিশ্বস্ত’ পিজিটিদের। ‘গুরু’র দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে তাঁরা রোগী-রোগিণীদেরই শুধু বিপদ ডেকে আনেন না, নিজেদেরও কেরিয়ারও সঙ্কটে ফেলেন। তাই স্বাস্থ্যদপ্তরের এই কড়া বার্তা।