• কলেজ থাকলেও শিক্ষকের অভাব, পড়াশোনায় উৎসাহ হারাচ্ছে ছাত্ররা
    এই সময় | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সুজিত রায়, আলিপুরদুয়ার

    ঝাঁ চকচকে ভবন। কিন্তু নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। এর ফলে ধুঁকছে কামাখ্যাগুড়ি ক্ষুদিরাম কলেজ। অসম-বাংলা সীমানার গ্রামীণ এলাকার ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটে আসতে হতো প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ারে। সেই সমস্যা দূর হয়েছে। নতুন কলেজের চাহিদা পূরণ হয়েছে বটে। কিন্তু এখানে পড়াবেন কারা?

    ২০০৬ সালে তৎকালীন বাম সরকার আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়িতে চালু করে শহিদ ক্ষুদিরাম মহাবিদ্যালয়। কামাখ্যাগুড়ির পাশেই অসম সীমানা। তার পাশেই রয়েছে কোচবিহার জেলার দু’টি বড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখান থেকেও ছাত্রছাত্রীরা আসছেন এই কলেজে।

    সরকার বদলের পর পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে অনেকটাই। কলেজের দু’টি ভবন, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, সবই ঝাঁ চকচকে। কিন্তু শিক্ষকের অভাব পূরণ হয়নি। কুমারগ্রাম, বারবিশা, কামাখ্যাগুড়ি–সহ আলিপুরদুয়ার–২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকার বহু ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য এই কলেজে ভর্তি হন। এখন কলেজের পড়ুয়ার সংখ্যা ছয় হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। মোট পড়ুয়ার ৫৭ শতাংশ ছাত্রী।

    গ্রামীণ এলাকার কলেজগুলির মধ্যে ছাত্রসংখ্যার বিচার অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পিছনে ফেলবে এটি। পরিকাঠামোর উন্নতি হলেও গোড়ায় গলদটা থেকেই গিয়েছে। শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন নিয়মিত ব্যাহত হচ্ছে। কোনওরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে পঠনপাঠন।

    কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলচন্দ্র সরকার বলেন, ‘ছাত্র-শিক্ষক আনুপাতিক হার যতটা থাকার কথা, এখানে বিস্তর ফারাক। ২৫ জন ছাত্রপিছু একজন শিক্ষক থাকা উচিত। আমাদের কলেজে ২০৫ জন ছাত্রপিছু একজন শিক্ষক রয়েছেন। ফলে কলেজে বহু বিষয় থাকলেও পড়ানোর জন্য স্থায়ী শিক্ষক নেই। অনেক ক্ষেত্রেই অন্য কলেজ থেকে শিক্ষক চেয়ে আনতে হয়।’ মাত্র ১৪ জন অধ্যাপক ও কয়েকজন স্টেট এইডেড কলেজ শিক্ষক রয়েছেন কামাখ্যাগুড়ি কলেজে। নতুন করে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিভাগ খোলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক কোথায়!

    পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না আগে। কলেজের পরিচালন সমিতির মনোনীত সদস্য বিপ্লব নার্জিনারি বলেন, ‘কলেজে ছাত্র–শিক্ষকের আনুপাতিক হার ঠিকই ছিল। কিন্তু সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বদলি নীতিতে কলেজের প্রায় ১১ জন শিক্ষককে ছেড়ে দিতে হয়েছে। সেই জায়গায় খুব কম সংখ্যক শিক্ষক এসেছেন। ফলে বড় একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছে।’

    অধ্যক্ষ জানান, উচ্চশিক্ষা দপ্তর বলেছে, এই মুহূর্তে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু ছাত্রদের সংখ্যা কমছে। কাজের বাজার ভালো নয়, অনেক ছাত্র এমএ, পিএইচডি করে বসে আছে। এটা দেখে ছেলেরা পড়াশোনায় উৎসাহ হারাচ্ছে। ড্রপ আউট কমাতে কলেজে ট্যুরিজম, চা কিংবা হর্টিকালচার নিয়ে বৃত্তিমুখী কোর্স করানোর চিন্তাভাবনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।’

    কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি শুক্লা ঘোষ বলেন, ‘সমস্যা তো রয়েছে। চেষ্টা চলছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তরে বার বার জানানো হচ্ছে।’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সমীর ঘোষের বক্তব্য, ‘এই কলেজে অনেক নতুন বিষয় চালু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক সমস্যা আছে। তা পূরণের চেষ্টা হচ্ছে।’

    কলেজে ন্যাকের পরিদর্শন চলছে। এ জন্য খরচ হচ্ছে ১০ লক্ষ টাকা। শিক্ষকই যেখানে অমিল, সেখানে কিসের সমীক্ষা! কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও বলেন, ‘নিয়োগ নেই। আগামীতে হবে কি না, তা নিয়ে ও প্রশ্ন আছে। শিক্ষা–সহ সব দপ্তরের একই অবস্থা।’
  • Link to this news (এই সময়)