‘নিউ মিশন অন আর্বান পভার্টি অ্যালিভিয়েশন’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় পরিবহণ ক্ষেত্রের অসংগঠিত কর্মীদের আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেই খবর। কলকাতার রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটির তরফে বাস সংগঠনগুলির কাছে সেই ফর্ম পাঠিয়ে তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মীর নাম, বাবার নাম, ফোন নম্বর, তিনি বাস কিংবা মিনিবাস, কোন ধরনের মাধ্যমে কী ভাবে জড়িত, পরিবারে সদস্য-সংখ্যা কত— এই সব জানতে চাওয়া হয়েছে। কলকাতা আরটিএ জানাচ্ছে, সব ধরনের পরিবহণ শ্রমিককেই এই প্রকল্পের আওতায় আনার কথা ভাবছে সরকার।
কেন এই উদ্যোগ? কলকাতা আরটিএ সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভায় সম্প্রতি একটি বৈঠকে এই ধরনের উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল। যদিও পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা জানান, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন।
উল্লেখ্য, গত মাসে সল্টলেকের রাস্তায় বাসের ধাক্কায় স্কুটার আরোহী এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পরেই বাসকর্মীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে পরিবহণ ও নগরোন্নয়ন দফতর বেশ কিছু ঘোষণা করেছিল। তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছিল, কমিশন প্রথা তুলে দিতে চায় রাজ্য। প্রয়োজনে কর্মীদের বেতন দেবেন বাসমালিকেরা। কমিশনের পিছনে ছুটতে গিয়ে কোনও ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটানো সরকার বরদাস্ত করবে না। সল্টলেকের ওই দুর্ঘটনার পরে বৈঠকে ঘোষণা করা হয়েছিল, এমন কোনও ব্যবস্থা করা হবে, যাতে চালক স্টিয়ারিং ধরার পরেই তাঁকে নজরে রাখা যায়।
তার পরেই বাস শ্রমিকদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের এই ফর্মটি ছাড়া হয়েছে। ফলে, মনে করা হচ্ছে, এ বার সরকার চাইছে, বাসকর্মীদের নজরে রাখতে। এত দিন পরিবহণ শ্রমিকদের সম্বন্ধে বিশদ তথ্য সরকার চায়নি বলেই দাবি বাসমালিকদের। ফর্মে রুট অনুযায়ী বাসকর্মীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এক বাসমালিক জানান, কেন এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেটা তাঁদের কাছেও স্পষ্ট নয়। সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘কোভিডের পর থেকে কর্মীর অভাবে বাস পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কাজ করতে চাইছেন না লোকজন। অনেকেই গাড়ি, বাইক কিনে ক্যাব সংস্থায় নাম লিখিয়েছেন। এর পরে যদি বাসকর্মীদের নিয়ে বাড়তি কড়াকড়ি হয়, তবে আরও সমস্যা বাড়বে।’’ সূত্রের খবর, আচমকা তথ্য সংগ্রহের ফর্ম দেখে অনেকেই তা পূরণে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন।
যদিও অনুমান, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরিবহণ শ্রমিকদের ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও সেখানে একটি অংশের টাকা রাজ্যের দেওয়ার কথা।
উল্লেখ্য, এই রাজ্যে বেসরকারি বাসচালক বা কন্ডাক্টরদের বাঁধা বেতন নেই। অসুস্থ হলে, মৃত্যু হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের চিকিৎসার খরচ বা ক্ষতিপূরণের জন্য শ্রমিক সংগঠন ও বাসমালিকদের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলে। সে ক্ষেত্রে অসংগঠিত বাস শ্রমিকদের সরকারি সাহায্যের আওতায় আনলে ভোটবাক্সে সুফল মিলবে ভেবেই রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ, এমনও মনে করছে কিছু মহল।