শুক্রবার রাতে নন্দনে ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের আসরে এই দৃশ্য দেখা গেল। পরিচিতি সত্তা, জাতি, রাষ্ট্র, ধর্ম, ভাষা নিয়ে স্পর্শকাতরতার দিনে এখনও কিছু পরিসরে আন্তর্জাতিকতাবোধের স্বরটাই বড় হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ার ছবি ‘মাই মেলবোর্ন’-এর চার পরিচালক ওনির, ইমতিয়াজ় আলি, রিমা দাস, কবীর খান এ দেশের চলচ্চিত্র জগতে সুপরিচিত। মেলবোর্নের পটভূমিতে অস্ট্রেলিয়ার ছবিটির প্রযোজকও দু’দশকের মেলবোর্নবাসী প্রবাসী বাঙালিনি মিতু ভৌমিক।
মিতু বলছিলেন, ‘‘ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখলেন, তিনি কোনও অভিনেত্রী নন, নিজের জীবনের পার্টটাই করছেন।’’ চার পরিচালককে নিয়ে একটি ছবির মধ্যেই চার ছবির গল্পকে বুনেছেন মিতুরা। তাতে নগরজীবনে কোণঠাসা, প্রান্তিক মানুষের চারটে মুখ। প্রথম ছবিতে একটি বাঙালি হিন্দু সমকামী ছেলের গল্প। দেশ থেকে আসা তার বাবার সঙ্গে টানাপড়েন। পরিচালক ওনির। ইমতিয়াজ়ের নির্দেশনায় এক পঞ্জাবি বংশোদ্ভূত মেয়ের জীবন। রেস্তরাঁয় শেফের চাকরির পাশাপাশি যাকে নিত্য বরের দুর্ব্যবহার সইতে হয়। মানসিক ভাবে টালমাটাল এক ভিখারিনির সঙ্গে একাত্ম বোধ করে মেয়েটি। আর একটি ছবি শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ের নাচ শেখার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে। শেষ ছবিতে ক্রিকেটেই জীবনের মানে খুঁজে পায় মা, দিদিকে নিয়ে দেশান্তরী আফগান কন্যা। মিতু বললেন, ‘‘আফগান মেয়েটি ও বধির মেয়েটি ছবিতে নিজেদের ভূমিকাতেই রয়েছেন।’’ ‘মাই মেলবোর্ন’ আগামী বছরে এ দেশে মাল্টিপ্লেক্সে রিলিজ় করাতে চান মিতুরা। চারটি ছবিতেই সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা। প্রান্তিক জীবনের নানা রং ফুটিয়ে তোলা ছবির ক্যানভাস যেন, আজকের কলকাতার নানারঙা জীবনেরও আয়না হয়ে ওঠে।
ছবির টানে কলকাতা জুড়ে এখন নানারঙা মানুষেরও ভিড়। ভারতীয় ভাষার ছবির প্রতিযোগিতায় জুরি সদস্য তিন লড়াকু মহিলা। ইরানে নারী অধিকার নিয়ে সক্রিয় চলচ্চিত্রকার নাহিদ হাসানজ়াদেহ, জার্মানিবাসী তুর্কিশ-কুর্দি চিত্রপরিচালক আইশা পোলাত এবং তথ্যচিত্রের জন্য পরিচিত নেদারল্যান্ডসবাসী আফগানকন্যা আলকা সাদাত। নিউ মার্কেটের নাহুমে ইমতিয়াজ় আলিকে চিনে ফেলে পথচলতিরা ছবি তোলার আবদার করছেন। আবার কফি হাউসে পরিচিতদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছেন আর্জেন্টাইন নায়িকা এলিয়োনারা ওয়েক্সলার। তাঁকে ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর ভূমিকায় দেখে এ বার বেশ মুগ্ধ সিনেরসিকেরা। ‘থিংকিং অব হিম’ ছবিটিতে চলচ্চিত্র উৎসবের পুরনো অতিথি পাবলো হুস্তিনো সিজ়ার সমকালের আর্জেন্টিনায় রবীন্দ্রনাথের অভিঘাতের কথা বলেছেন। ২০১৮-র ছবিতে কলকাতা, শান্তিনিকেতনের দৃশ্য। উঠে এসেছে ওকাম্পো ও রবীন্দ্রনাথের বন্ধুতাও। রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। পাবলো বললেন, ‘‘ভারতীয়দের রবীন্দ্রনাথ নিয়ে স্পর্শকাতরতা বুঝেই ছবিটা করেছি।’’ তবু শুধু দার্শনিক, কবি নন মানুষ রবীন্দ্রনাথেরও ছোঁয়াচ ছবিটিতে। পাবলো ও তাঁর ভারতীয় প্রযোজক সুরজ কুমার বাংলায় ফের শুটিং করতে আসতে চান বলেও জানালেন। শনিবার সন্ধ্যায় গৌতম ঘোষের নতুন ছবি ‘পরিক্রমা’ দেখল নন্দন।