• বগটুই-ক্ষোভ অতীত? কেষ্টর সামনে করজোড়ে মিহিলাল
    আনন্দবাজার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বগটুই গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাঁর মা, বোন, দিদি, স্ত্রী, মেয়ে, জামাই-সহ ১০ জন আত্মীয়। ২০২২-এর ২১ মার্চ রাতের ওই ঘটনার পর যখন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ‘টিভি বিস্ফোরণের’ কথা বলেছিলেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন স্বজনহারা মিহিলাল শেখ। আড়াই বছরেরও বেশি সময় পার করে শনিবার মিহিলালকে রামপুরহাটের তৃণমূল কার্যালয়ে দেখা গেল অনুব্রতর সামনে করজোড়ে দাঁড়াতে। কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের বর্তমানে চাকরি স্থায়ী করতে হবে। যাদের দ্বারা সেটা হবে, তাদের প্রতি রাগ করে থাকলে হবে?’’

    তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ খুনের পরে পাল্টা হামলায় মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী থেকেছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। ওই ঘটনার অব্যবহিত পরে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রতর টিভি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত মন্তব্যে স্বজনহারা-সহ গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে গিয়ে স্বজনহারাদের সাহায্য ও চাকরির ঘোষণা করেন। তার পরেও অবশ্য ক্ষোভ পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। একদা তৃণমূলকর্মী মিহিলাল-সহ স্বজনহারাদের একাধিক পরিজনের শাসক দলের প্রতি ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের নিজেদের শিবিরে টানতে সক্ষম হয় বিজেপি।

    ওই ঘটনার পরে বগটুই গ্রামেও তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। তার প্রকাশ ঘটেছিল এক বছর পরেও। বগটুই কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গ্রামে গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন অনেকে। ঘরে ঢুকতেও বাধা দেওয়া হয় আশিসকে। আশিস ও অনুব্রতর বিরুদ্ধে একাধিক বার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মিহিলাল। গত পঞ্চায়েত ভোটে মিহিলালের পরিবারের তিন সদস্য বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের হয়ে প্রচারও করেছিলেন মিহিলাল।

    শনিবার সেই মিহিলাল যখন অনুব্রতর দিকে করজোড়ে নমস্কার করছেন, তখন তাঁর পাশেই বসে ছিলেন আশিস। পরিস্থিতির ‘চাপে’ই এমন উলটপুরাণ বলে জানান মিহিলাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওখানে নিজের কাজে গিয়েছিলাম।’’ কিন্তু যে অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে, সেই অনুব্রতর প্রতি ক্ষোভ কি চলে গিয়েছে? মিহিলালের জবাব, ‘‘পরবর্তী কালে ওই কথা ওঁর বলা ঠিক হয়নি বলে উনি জানিয়েছিলেন। ওই বিষয় নিয়ে আমি এখনমাতামাতি করতে যাচ্ছি না। এখন যেগুলো কাজ আছে সেগুলো ওঁদের দিয়েই করতে হবে।’’

    বস্তুত, একদা অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধীর পরে তাঁর ‘শরণাগত’ হওয়ার নজির আগেও রয়েছে বীরভূমে। এক সময়ে অনুব্রতর তীব্র বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন পাঁড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূলকর্মী হৃদয় ঘোষ। এমনকি তাঁর বাবার খুনের জন্য তিনি সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলকেই দায়ী করেছিলেন। যদিও পরে সেই কেষ্ট-শরণে গিয়েই তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য তিনি।

    তৃণমূল সূত্রে দাবি, বগটুইয়ে বর্তমানে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও অনেকেই তৃণমূলে যোগদান করেছেন। মিহিলাল অবশ্য এ দিন প্রকাশ্যে দাবি করেছেন এখনও তিনি বিজেপিই করছেন। তবে সেই সঙ্গেই বলছেন, ‘‘দল নিয়ে আমি আর মাতামাতি করছি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যা হয়েছে তা ভোলার নয়। এখন আমাদের নিয়ে সকলে রাজনীতি করছে। যেখানে সুবিধা হবে আমাকে সেখানে যেতে হবে। যদি আমার কাজটা উদ্ধার হয়ে যায় তার জন্য আমাকে যেতে হবে।’’

    মিহিলাল শেখের এই তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে আসা নিয়ে অনুব্রত বলেন, ‘‘মিহিলাল যখন দলীয় কার্যালয়ে আসছেন, তখন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেই পারেন।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা বগটুইয়ের স্বজনহারা পরিবারের পাশে আগেও ছিলাম, এখনও রয়েছি। এখন মিহিলাল কী করবেন সেটা তাঁকেই ঠিক করতে হবে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)