• বাড়তি সতর্কতা আবাস প্রকল্পে টাকা দেওয়ার আগে
    আনন্দবাজার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • আবাস প্রকল্পে টাকা দেওয়ার আগে প্রত্যেক উপভোক্তার জন্য একটি করে সুনির্দিষ্ট নম্বর (ইউনিক আইডি) তৈরির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সূত্রের দাবি, সম্প্রতি নবান্ন যে বিধি স্থির করে দিয়েছে, তাতে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে প্রতিটি জেলাকে। প্রশাসনিক সূত্রের মতে, একের বরাদ্দ অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাতে বিতর্ক তৈরি না হয়, তা ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ। এ কাজে পুলিশকেও সক্রিয় ভাবে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। ট্যাবের টাকা একের বদলে অন্যের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক, তার পরে পুলিশকে সক্রিয় করেছিল নবান্ন। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সেই ঘটনার পরে আবাসের ক্ষেত্রেও আগাম এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস প্রকল্পে টাকা ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীঘ্রই জেলায় জেলায় বিভিন্ন এলাকায় শিবির চালু করেছে সরকার। সেখানে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাচাই এবং ইউনিক-আইডি দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই অর্থ দফতর নির্দেশ দিয়েছে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুরক্ষা বিধি মেনে আর্থিক অনুদান বিলি করতে হবে। এ নিয়ে অর্থ দফতর প্রত্যেকটি দফতরের প্রধানকে লিখিত ভাবে করণীয় স্থির করে দিয়েছেন।

    প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ-সহ কম্পিউটার-ল্যাপটপের মাধ্যমে গোটা বিষয়টি পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শিবিরগুলিতে। ব্লক-ভিত্তিক আধিকারিকদের যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে একেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে। তাঁরা গোটা কর্মপদ্ধতির দিকে নজর রাখবেন। ওটিপি এবং ওটিপি-বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, উপভোক্তা তালিকা মৌজা বা গ্রামভিত্তিক ভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। যাতে গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু একেকটি শিবিরে ১৫০-২০০ জনের বেশি ভিড় না হয়। কোন উপভোক্তা কোন শিবিরে যাবেন, তা জানিয়ে দেবে স্থানীয় প্রশাসন। আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই এবং আধার-সংযুক্ত মোবাইল নম্বর সঙ্গে থাকতে হবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রমাণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বৈধ মোবাইল নম্বরে ওটিপি মিলিয়ে তবে বাকি কাজ হবে। গোটা প্রক্রিয়ার উপর বিডিও-রা যেমন নজর রাখবেন, পুলিশের উপরেও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঠেকাতে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক কর্তার কথায়, “এই প্রক্রিয়ার সময়েই এক এক জন উপভোক্তা একটি করে ইউনিক-আইডি পাবেন। তার ভিত্তিতেই টাকা ছাড়া হবে। পরবর্তীতে সেই ইউনিক-আইডি ধরেই যাচাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যাঁদের আধার সংযুক্ত মোবাইল নম্বর নেই, তাঁদের ক্ষেত্রেও বায়োমেট্রিক ব্যবহার করা হবে।”

    প্রসঙ্গত, আবাস তালিকা যাচাইয়ের সময়েও এলাকায় এলাকায় সেই পদ্ধতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন উপভোক্তাদের একাংশ। নাম বাদ যাওয়া নিয়ে বিক্ষোভও হয় জায়গায় জায়গায়। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনগুলিকে বাড়তি সতর্ক করেছিলেন। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ট্যাব-কাণ্ডের পরে এ বার আরও সতর্ক থাকার বার্তাই দেওয়া হচ্ছে জেলাগুলিকে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকেও সে ব্যাপারে নজর রাখা হবে। সূত্রের দাবি, গোটা প্রক্রিয়ায় রাজ্য পুলিশের শীর্ষমহলেরও নজর থাকবে পৃথক ভাবে।

    প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, আবাসের তালিকায় প্রায় ১১ লক্ষ উপভোক্তার নাম ছিল। তার পরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আরও এক লক্ষ মানুষকে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবাস প্রকল্পের দু’টি কিস্তিতে ৬০ হাজার করে টাকা মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন উপভোক্তারা। ফলে ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে প্রাথমিক দফায় দেওয়া হবে প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা (৬০ হাজার করে টাকার হিসেবে)। পরের কিস্তিতে পরে সমপরিমাণ টাকা দেবে সরকার। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আবাসের বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপানউতোর এখনও অব্যহত। আবার উপভোক্তাদের চাহিদাও রয়েছে তুঙ্গে। সম্ভবত এই কারণে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)