উত্তর কলকাতার বাজে কদমতলা ঘাটের বাঁ দিক থেকে সোজা প্রিন্সেপ ঘাট সংলগ্ন দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজের নীচ পর্যন্ত গঙ্গা তীরবর্তী অংশে নারকেল গাছ বসানোর কাজ চলছে। প্রথম দফায় প্রায় ৩৫০ এবং দ্বিতীয় দফায় ৭০ গাছ বসানো হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র। গতিপথ বদলাচ্ছে কলকাতার গঙ্গা। সেই কারণে ভাঙনের ভ্রুকুটি দেখা দিয়েছে উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যশালী নিমতলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন এলাকায়। গঙ্গা নিজের গতিপথ বদল করছে। তাই হাও়ড়ার বেলুড়ের দিকটায় অনেক পরিমাণে পলি পড়ে যাচ্ছে, ফলে গঙ্গা বিপরীত পারে অন্য পথে চলে যাচ্ছে। এটা খুবই বিপজ্জনক হচ্ছে বলেই মনে করছেন পুরসভার আধিকারিকরা। কলকাতার গঙ্গা থেকে ফলতা পর্যন্ত নদী নিজের গতিপথ বদল করছে। ওপাড়ে পলি পড়ে এ পাড়ে গতিপথ বদল হচ্ছে। আর সেই ভাঙনের মোকাবিলা করতেই কলকাতার নদীর নারকেল গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নিমতলা মহাশ্মশান। কলকাতা এই অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, যা বহু বছর ধরে শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চেতনাকে ধারণ করে রেখেছে। সেই শ্মশান এখন নদী ভাঙনের করালগ্রাসে। এই মহাশ্মশান শুধুমাত্র একটি দাহস্থল নয়, বরং এখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ায় এটি এক স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষকৃত্য এখানে সম্পন্ন হয়েছিল, যা এই স্থানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মর্যাদা দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের দাহকালের সেই মুহূর্ত আজও বহু বয়স্ক মানুষের কাছে এক আবেগঘন স্মৃতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, কলকাতার আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন বিধানচন্দ্র রায়, ক্ষিতিমোহন সেন, এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের শেষকৃত্যও নিমতলায় সম্পন্ন হয়েছে, যা এই স্থানকে আরও বেশি স্মৃতিবিজড়িত করে তুলেছে।
শুধুমাত্র শেষকৃত্যের স্থান হিসেবে নয়, নিমতলা মহাশ্মশান শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং বাঙালির আবেগের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। তাই ভাঙনের আশঙ্কায় কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিন্তিত কলকাতা পুরসভাও। যদিও নিমতলা-সহ শহরের একাধিক ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখভালের দায়িত্ব মূলত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই। তাই এখন কলকাতা পুরসভাও কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী।
কিন্তু এ ভাবে নারকেল গাছ লাগিয়ে কি আদৌ ভাঙন রোধ করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘নদীর পারে নারকেল গাছ লাগানো যেতেই পারে। তবে সে সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির ব্যবহার করা উচিত। তবে সবার আগে নদীর কত গভীরতা থেকে ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, তা দেখে নেওয়া জরুরি। তেমনই আবার কলকাতা ও হাওড়া শহরে নদীর ধার দিয়েই যানবাহন চলাচল করে। তার ফলে নদীর পারগুলি বর্তমানে কেমন অবস্থায় রয়েছে, সেই বিষয়েও গবেষণামূলক কাজের প্রয়োজন রয়েছে।’’