বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার কামারপুকুর গ্রামের ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আটেক আগে বিষ্ণুপুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পিঙ্কির সঙ্গে বিয়ে হয় বিষ্ণুপুর থানার এমআইটি সংলগ্ন কামারপুকুর গ্রামের পেশায় ট্র্যাক্টর চালক বাপি লোহারের। ওই দম্পতির বছর সাতেকের এক সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর পিঙ্কি স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকা হিসাবে কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তাঁদের সংসারে অশান্তি। স্ত্রী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক জড়িয়েছে বলে সন্দেহ করে প্রায়ই তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বাপি। সহ্য করতে না পেরে পিঙ্কি বেশ কয়েক বার বাপের বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। পরে বাপের বাড়ির লোকেরাই তাঁকে আবার শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে যেতেন। শনিবার বাপি বাড়িতেই ছিলেন। স্ত্রীকেও বাড়িতে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু পিঙ্কি স্বামীর কথা না শুনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, পিঙ্কি বাড়ি ফিরে আসার পর বাপি তাঁকে নিয়ে জঙ্গলে গিয়েছিলেন কাঠ আনার নাম করে। তার পর জঙ্গলেই স্ত্রীকে খুন করেন স্বামী।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত জেরায় জানিয়েছেন, স্ত্রীর পরনের কাপড় তাঁর গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন তিনি। এর পর স্ত্রীর বাপের বাড়িতে ফোন করেন। জানান, তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এতে সন্দেহ হয় পিঙ্কির বাপের বাড়ির লোকেদের। পরে তাঁরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পিঙ্কির বাবা সঞ্জয় লোহার বলেন, ‘‘মেয়ের সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়েই আমি ওকে বারবার শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে এসেছি। তখন জানতাম না মেয়েকে এ ভাবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেরে ফেলবে। শনিবার বিকেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে টেলিফোনে জানায়, মেয়ে জঙ্গলে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গিয়ে দেখি, জঙ্গলে নয়, মেয়ের দেহ শ্বশুরবাড়ির উঠোনে শোয়ানো। এতেই আমার সন্দেহ হয়। আমার মেয়েকে যারা খুন করেছে, তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুপ্রকাশ দাস বলেন, ‘‘পিঙ্কি লোহারকে খুনের ঘটনায় তাঁর স্বামী বাপি লোহারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বাপি লোহার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের কথা স্বীকার করেছে। ধৃতকে রবিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করিয়ে আমরা আট দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়েছি।মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’