• নলহাটি-পাকুড় শাখার সঙ্গে আজিমগঞ্জের সংযোগ, বা‌ইপাস নির্মাণের কাজ শুরু করল রেল মন্ত্রক
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: যোগাযোগের উন্নতি ও গতি বজায় রাখতে নলহাটি-পাকুড় শাখার সঙ্গে আজিমগঞ্জ শাখার বাইপাস লাইন সংযোগের কাজ শুরু করল রেল। এক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা রেলের। এর ফলে বীরভূমের সঙ্গে নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় হবে। 


    রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৬৩সালে নলহাটি-আজিমগঞ্জ শাখা চালু করে একটি কোম্পানি। ৪৫কিমি ট্র্যাকটি আগে ন্যারোগেজ ছিল। পরবর্তীকালে ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়। ১৮৭২ সালে ভারত সরকার তা কিনে নেয়। লাইনটির নাম পরিবর্তন করে নলহাটি স্টেট রেলওয়ে রাখা হয়। ১৮৯২ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির অংশ হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে নলহাটি থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত ডবল লাইন ও বিদ্যুতায়ন হয়। দিনের অধিকাংশ সময় এই লাইনে মালগাড়ি চলে। বিশেষ করে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লাবোঝাই মালগাড়ি যায়। যাত্রীবাহী ট্রেন হাতে গোনা। এক্সপ্রেস ট্রেন বলতে হাওড়া-আজিমগঞ্জ কবিগুরু ও গণদেবতা এক্সপ্রেস। 


    কয়েক মাস আগে হাওড়া ভিভিশনের নলহাটি-পাকুড় শাখার সঙ্গে নলহাটি আজিমগঞ্জ শাখার বাইপাস লাইন সংযোগ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে রেল। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেই নলহাটির পাইকপাড়া ও ডাঙাপাড়ার লেভেল ক্রসিং গেট থেকে সেই বাইপাসের কাজ শুরু হল। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজিমগঞ্জ শাখায় নলহাটির পরেই তকিপুর স্টেশন। সেই স্টেশন থেকেই নতুন একটি লাইন বেরিয়ে নলহাটি বাইপাস হয়ে যাবে। যেটি যুক্ত হবে পাকুড় শাখার নলহাটি স্টেশনের অদূরে আশ্রমপাড়ার কাছে। তার জন্য তকিপুর স্টেশনে ইলেক্ট্রনিক ইন্টারলকিংয়ের কাজও হবে। এর ফলে নলহাটি-আজিমগঞ্জ লাইন সরাসরি নলহাটি-পাকুড় লাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। 


    রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এতে নলহাটিকে বাইপাস করে তকিপুর দিয়ে চাতরা, মুরারই, রাজগ্রাম, পাকুড়, বারহাড়োয়া, সাহেবগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন চালাতে পারবে রেল। পাকুড় থেকে পাথরবোঝাই মালগাড়িগুলি নলহাটিকে বাইপাস করে তকিপুর, লোহাপুর হয়ে নসিপুর ব্রিজ দিয়ে যেতে পারবে। এই লাইনের ফলে সব থেকে বেশি উপকৃত হবে মুরারই বিধানসভার মানুষ। যাঁরা দীর্ঘদিন থেকেই রেল পরিষেবায় উপেক্ষিত। এই এলাকার বাসিন্দা অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, এতে কাটোয়া ও ব্যান্ডেল হয়ে কলকাতায় যাওয়া যাবে। তেমনই সাহেবগঞ্জ থেকে কোনও ট্রেন দিলে নলহাটি বাইপাস হয়ে ভায়া নসিপুর ব্রিজ দিয়ে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর হয়ে শিয়ালদহ যাওয়ার সুবিধা হবে। দু’টি রুট খুলে যাবে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। 


    মুরারই নিত্য রেলযাত্রী সঙ্ঘের পক্ষে জগন্নাথ সেবাদত্ত বলেন, চাতরা, মুরারই, রাজগ্রাম, কোটালপুকুর, পাকুড়ের সঙ্গে সরাসরি আজিমগঞ্জের যোগাযোগ ছিল না। এই লাইন হওয়ার ফলে সুবিধা হবে। সেই সঙ্গে যাতায়াতে সময় কম লাগবে। সাহেবগঞ্জ-বর্ধমান লুপ লাইন থেকে এই রুটে শিয়ালদহ যাওয়ার ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা কম সময় লাগবে। তেমনই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকে নতুন এই রুট দিয়ে চালাতে পারবে রেল। 


    নলহাটি জংশনের উন্নতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে নাগরিক মঞ্চ। মঞ্চের অন্যতম সদস্য রাজেন্দ্র মিশ্র বলেন, আজিমগঞ্জ যেতে ট্রেন ধরার জন্য নলহাটিতে পৃথক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। পাশেই বোলপুর-রাজগ্রাম রোডের উপর লেভেল ক্রসিং রয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময় সেই গেট পড়ে থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষকে। বাইপাস লাইন হওয়ার ফলে সরাসরি ট্রেনগুলি চলাচল করতে পারবে। ইতিমধ্যে ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মটি ৩৫৫ মিটার থেকে ৭০০ ফুট পর্যন্ত বাড়াতে মাপজোক করেছে রেল। যা আশ্রমপাড়ার পর্যন্ত চলে যাবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)