আমড়াডাঙায় অনুন্নয়ন, বেহাল রাস্তা ও পানীয় জলের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, বোলপুর: অনুন্নয়নের অন্ধকারে আমড়াডাঙা গ্রাম। গ্রামের ৯০ শতাংশ পরিবারই বঞ্চিত বাংলার বাড়ি প্রকল্প থেকে। এমনকী, নেই অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের রাস্তাও। ফলে, গর্ভবতী মহিলা ও জরুরিকালীন রোগীদের নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এটি বোলপুর- শ্রীনিকেতন ব্লকের রায়পুর-সুপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। মূলত, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ক্ষেত মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের আক্ষেপ, ভোটের সময়ে নেতারা আসেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেয়। কিন্তু তারপর, পরের নির্বাচন পর্যন্ত তাঁদের টিকি খুঁজে পাওয়া যায় না। সিপিএম নেতা গৌতম ঘোষ বলেন, এটাই তো এই সরকারের বাস্তব চিত্র। নেতারা বড়লোক হচ্ছেন আর গরিবরা প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন না। ঘটনার কথা নজরে আসতেই বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে কী কী কাজ হয়েছে, তা দেখতে খুব শীঘ্রই ওই গ্রাম পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
বোলপুর থেকে ভেদিয়া যাওয়ার রেলপথের নীচেই রয়েছে এই আমড়াডাঙা গ্রাম। গ্রামবাসীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে দু’টি রেলফুকো। তারমধ্যে একটি ফুকো অত্যন্ত সংকীর্ণ। এর মধ্যে দিয়ে মানুষ হেঁটে, সাইকেল ও বাইক নিয়ে যাতায়াত করেন। অন্য ফুকোটি বড় হলেও প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরপথে যেতে হয়। যদিও সেই রাস্তা কঙ্কালসার ও চলাচলের অযোগ্য। অথচ অ্যাম্বুলেন্স সহ অন্যান্য যান চলাচলের অন্য বিকল্প রাস্তা না থাকায় কয়েক যুগ ধরে ওই রাস্তা ব্যবহার করতে এলাকাবাসীরা কার্যত বাধ্য হচ্ছেন। এ গ্রাম রায়পুর-সুপুর পঞ্চায়েতের রজতপুর ১৯ নম্বর সংসদের অন্তর্গত। আমড়াডাঙা ছাড়াও এই সংসদের মধ্যে রয়েছে ঘেরোপাড়া, অভিরামপুর, দক্ষিণ নারায়ণপুর, নতুন গীতগ্রাম, মুলুক কালীতলা এলাকা। এখানে অনুন্নয়নের শিকার আমড়াডাঙার ৯০টি পরিবার। প্রায় সকলেই দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন। অথচ এই মানুষগুলিই উন্নয়ন ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। গ্রামে রয়েছে মাত্র একটি গভীর নলকূপ। খারাপ হলে গ্রামে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকুপই ভরসা। গ্রামের যুবক শ্যাম ও লক্ষ্মীরাম মাড্ডি বলেন, ঢালাই রাস্তা থাকলেও তা অত্যন্ত সংকীর্ণ। এছাড়া খাল থাকার জন্য ওই রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারে না। ওই খালে দীর্ঘদিন ধরে পাইপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু পঞ্চায়েত তাতে আমলই দেয়নি। সর্বোপরি, এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রাপ্য বাড়ি থেকে বঞ্চিত। গ্রামবাসীদের মধ্যে কামিনী সরেন, সুকুল হেমব্রম, তানাদি মাড্ডি অভিযোগের সুরে বলেন, দীর্ঘকাল যাবৎ মাটির বাড়িতে বাস করছি। অথচ ভোটের সময় নেতারা বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ যাবৎ পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসে জানিও কোনও কাজ হয়নি। মরতে চললাম অথচ তালিকায় এখনও নাম উঠল না। মাসে ভাতা হিসেবে মাত্র এক হাজার টাকা পাই, ওটা দিয়েই কোনও রকমে সংসার চলে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান খুশি বাউরি বলেন, উন্নয়ন একেবারে হয়নি তা নয়। তবে আবাস প্রকল্পের নতুন তালিকায় অনেকের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। আশা করি দ্রুত গ্রামবাসীদের দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। -নিজস্ব চিত্র