• তমলুক সমবায় ব্যাঙ্কের ভোট ঘিরে তপ্ত নন্দীগ্রাম, বোমাবাজি, ইটবৃষ্টি, আতঙ্কে ছোটাছুটি
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, নন্দীগ্রাম: সমবায় ভোটে বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল নন্দীগ্রাম। রবিবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই দাউদপুর পঞ্চায়েতের কাঞ্চননগর দিদারুদ্দিন বিদ্যাভবনের সামনে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ঝামেলা বাধে। সেই ঝামেলা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় পুলিস। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে ১০০ মিটার দূরে বোমাবাজি করা হয়। ধোঁয়ার ঢেকে যায় গোটা এলাকা। আতঙ্কিত ভোটাররা প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক দৌড়ে পালান। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিস কর্মীদের অসহায় দেখায়। ঘটনাস্থলে পড়ে যান বিজেপির নন্দীগ্রাম-২ নম্বর মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মামণি জানা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বোমার স্প্লিন্টারে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীও জখম হন।


    রবিবার তমলুক কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মোট ১২টি জায়গায় ভোট ছিল। তমলুক ও হলদিয়া মহকুমার প্রায় প্রতিটি ব্লকে নির্বাচন ছিল। তবে, ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে সবার নজর ছিল নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৫৯২১জন ভোটার আছে। তাঁদের সকলের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল কাঞ্চননগর দিদারুদ্দিন বিদ্যাভবন। গত চার-পাঁচদিন ধরেই ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে ক্যাম্পঅফিস তৈরি করা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির দ্বৈরথ চলছিল। এই অবস্থায় ভোটের দিন হাঙ্গামার আশঙ্কা ছিলই। সেইমতো পুলিসও পর্যাপ্ত বাহিনী রেখেছিল। অতিরিক্ত পুলিস সুপার(হলদিয়া) মনোরঞ্জন ঘোষ এবং হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী নন্দীগ্রামে ছিলেন। সশস্ত্র, লাঠি ও গ্যাসধারী বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাফও ছিল। কিন্তু, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি পুলিস। বরং বোমাবাজির সময় পুলিসকে বেশ অসহায় দেখাচ্ছিল।  


    এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরু থেকেই ভোটারদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে নন্দীগ্রামে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। দু’দলের ক্যাম্পে প্রচুর সংখ্যক কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিল। বিজেপির অভিযোগ, তাদের ভোটারদের ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। বিষয়টি পুলিসের নজরে আনার পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ স্থানীয় দেবপ্রসাদ মাইতির বাড়ি লাগোয়া নার্সারিতে প্রথম বোমা পড়ে। ধোঁয়ায় ঢাকে গোটা এলাকা। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। অনেকে ভোটার আতঙ্কিত হয়ে ভোট না দিয়েই ফিরে যান। 


    এদিন মোট ১২টি জায়গায় ভোট হয়। মোট আসন সংখ্যা ৬৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৫৫ হাজার ৪৭১জন। এদিন নন্দীগ্রামের পাশাপাশি কোলাঘাটের দেউলিয়া হীরারাম হাইস্কুলের ভোটেও উত্তেজনা তৈরি হয়। বিজেপি কর্মীরা পুলিসের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পরে। তবে, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র বাছাই নিয়ে এদিন ভোটারদের অনেকেই ক্ষোভ উগরে দেন। ব্লকপ্রতি একটি করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল। অথচ, ব্লকের একেবারে প্রান্তিক এলাকায় সেই কেন্দ্র করা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


    বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ভোটের নামে প্রহসন করেছে তৃণমূল। বিরোধী ভোটারদের ভোট দিতে যেতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। তাতেও কাজ না হওয়ায় বোমা ফেলে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে।


    তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, সকাল থেকে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি। বোমাবাজির ঘটনায় ওদের লোকজন জড়িত। ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে অজুহাত খুঁজতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)