শহরের হোটেলে ‘নো এন্ট্রি’ বাংলাদেশিদের, বৈঠকে সিদ্ধান্ত শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: মালদহের পর শিলিগুড়ির হোটেলগুলিতেও বাংলাদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বিভিন্ন মহলের চাপে রবিবার বৈঠকে বসেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হোটেল মালিকরা। এদিকে, ফুলবাড়ি আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্দর দিয়ে বাংলাদেশিদের আনাগোনাও কমেছে। এদিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে এপারে এসেছেন মাত্র ১৩ জন। অভ্যন্তরীণ অশান্তিতে জেরবার বাংলাদেশে। ইতিমধ্যে পদ্মাপারে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিন্দুরা। বাড়িঘরের পাশাপাশি মন্দির ভাঙা চলছেই। এমনকী, ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গের মাটিতেও। ইতিমধ্যে মালদহে হোটেল ও লজে বাংলাদেশিদের রুম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিন সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বৈঠকে বসেন উত্তরবঙ্গের বাণিজ্যনগর শিলিগুড়ির হোটেল ব্যবসায়ীরা। তাঁরা গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। মালদহের মতো তাঁরাও বাংলাদেশিদের হোটেলের রুম ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, শহরে হোটেলের সংখ্যা ৩০০’র বেশি। যারমধ্যে ২০০ হোটেল মালিক এই সংগঠনের সদস্য। গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, বাংলাদেশিদের রুম ভাড়া না দেওয়ার দাবি বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হয়েছে। সেজন্যই এদিন জরুরি ভিত্তিতে অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক করা হয়। ভোটাভুটির মাধ্যমে বাংলাদেশিদের রুম ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশিদের রাখার পক্ষে ৩ থেকে ৪ শতাংশ এবং না রাখার পক্ষে ৯৭ শতাংশ মতামত দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশিদের হোটেল ও লজ ভাড়া না দেওয়া, সেদেশের পণ্য বয়কটের দাবিতে মহানন্দার পাড়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন শহরের বিধান মার্কেট, বিধানরোড, হিলকার্ট রোডে মিছিল করেছে। বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে। শহরের একাধিক জায়গায় ইউনুস বিরোধী পোস্টারও পড়েছে।
এদিকে, উত্তরবঙ্গ তো বটেই রাজ্যে বড় শহরগুলির মধ্যে শিলিগুড়ি অন্যতম। এটা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। মহানন্দা নদী বেষ্টিত এই শহরের পাশেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। উত্তরবঙ্গের এই বাণিজ্যনগরীর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল বাংলাদেশিরা। চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশুনা ও ভ্রমণ সহ বিভিন্ন কারণে তাঁরা এখানে নিয়মিত আসেন। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কিন্তু, পদ্মাপারের অস্থিরতার জেরে এবার সেই সম্পর্কে প্রভাব পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এদেশে বাংলাদেশির আনাগোনা কমছে। একই সঙ্গে প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে।
ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট সূত্রের খবর, যখন বাংলাদেশের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল, তখন দৈনিক ৭০-৮০ জন বাংলাদেশি আসতেন এপারে। তাঁদের অধিকাংশ এখানে চিকিৎসা করাতে এবং ঘুরতে আসতেন। এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। এদিন এপারে এসছেন মাত্র ১৩ জন বাংলাদেশি। আর এপার থেকে দেশে ফিরেছেন ২০ জন বাংলাদেশি। এখন নতুন করে ট্যুরিস্ট ভিসা বাংলাদেশিদের দেওয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র চিকিৎসা ভিসা দেওয়া হচ্ছে। ফুলবাড়ি সহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যবোঝাই লরির যাতায়াতও কমেছে। (ফুলবাড়ি সীমান্ত। - ফাইল চিত্র।)