তালিকায় এক পরিবারের ১২ জনের নাম, আবাসে দুর্নীতি! প্রতিবাদীকে মার
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, মানিকচক: তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের পরিবারের ১২ জনের নাম ছিল বাংলার বাড়ির তালিকায়। প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করায় অভিযোগকারী যুবকের উপর প্রাণঘাতী হামলা করা হল ভূতনির দক্ষিণ চণ্ডীপুরে। এলোপাথারি চাকুর আঘাতে গুরুতর আহত অভিযোগকারী দানেশ আলী (২৯) মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাকে ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। পেট্রোল বোমাও ছোড়া হয় বলে দাবি একাংশের। যদিও অঞ্চল তৃণমূল সভাপতির দাবি, সংঘর্ষের ঘটনায় তৃণমূল কোনওভাবে যুক্ত নয়। পারিবারিক বিবাদ ঘিরে অশান্তি হয়েছে। ভূতনি থানার পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চারজনকে আটক করেছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের লুটিহারা গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা আদুরি বিবি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিষান জাতির হয়ে লড়াই করলেও এখন তাঁরা তৃণমূল করেন। আদুরির স্বামী আবির আলী সহ মোট ১২ জনের নাম ছিল বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম তালিকায়। আশ্চর্যজনকভাবে এলাকার অন্য কোনও পরিবারের নামই ছিল না সেখানে। সেই ঘটনায় গর্জে উঠেন এলাকাবাসীরা। এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়ে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় যুবক দানেশ। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে প্রশাসন আবিরের পরিবারের ছয় সদস্যের নাম বাদ দেয় তালিকা থেকে। সেজন্য দানেশের উপর ক্ষিপ্ত ছিল আবিরের পরিবার। সেই আক্রোশের জেরে রবিবার সকালে দানেশকে একা পেয়ে হামলা চালায় আবিরের পরিবার। প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন চাকু দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে দানেশের গলার নলি কেটে দেওয়ার চেষ্টা করে। দানেশের স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন ছুটে গেলে তাঁদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। পরবর্তীতে গ্রামবাসীরা গিয়ে দানেশকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এই ঘটনার পরই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় লুটিহারা গ্রাম। দুই পরিবারের সংঘর্ষের সময় চারটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাইক। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
দানেশের কাকিমা রুনা বিবি বলেন, আবাস তালিকা নিয়ে অভিযোগ করায় এই সংঘর্ষ। পরিকল্পনা করে দানেশকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছে আবির। বাঁশ, চাকু, পিস্তল নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। মহিলা, শিশু সবাইকে মারধর করা হয়েছে। আমরা আতঙ্কে আছি।
যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আবিরের স্ত্রী তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য আদুরি। তিনি বলেন, বাংলার বাড়ি নয়, দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন বিবাদ চলছে। তার ফলে এই সংঘর্ষ। প্রথমে আমাদের পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে দানেশ। চারটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেকে এখন হাসপাতালে ভর্তি।
সংঘর্ষের ঘটনার পর ভূতনি থানা মোতায়েন করেছে বিশাল পুলিস বাহিনী। বসানো হয়েছে পুলিস পিকেট। ফের সংঘর্ষ এড়াতে টহল চলছে এলাকায়। -নিজস্ব চিত্র।