• ‘বেচাল’ রুখতে নজরদারি, ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মমতা
    আনন্দবাজার | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • দল এবং প্রশাসনের রাশ এখন কড়া হাতে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সূত্রেই শাসক দলের নেতা-বিধায়কদের একাংশ আপাতত এসে গিয়েছেন নজরদারির আওতায়। সূত্রের খবর, ওই নেতাদের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে প্রশাসনের একেবারে শীর্ষ স্তর থেকে।

    আর জি কর-কাণ্ডের জেরে ঘরে-বাইরে কিছুটা ‘চাপে’র মধ্যে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই পরিস্থিতি এখন তিনি সামলে নিয়েছেন। সদ্য উপনির্বাচনে বিপুল জয়ও রাজনৈতিক ভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। বিরোধীরা যখন ছত্রভঙ্গ, সেই সময়েই আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্ততিতে ঢুকে পড়েছেন তিনি। দলের মধ্যে কাদের ‘অভিমুখ’ কেমন, সে সব বুঝে নিয়েই বিধানসভা ভোটের ঘুঁটি সাজানোর চূড়ান্ত পর্ব শুরু হবে। নজরদারির প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট লক্ষ্য মাথায় রেখেই।

    শাসক শিবিরের বিধায়কদের মধ্যে হাতে-গোনা কয়েক জন বাদে বিশেষ কেউ ইদানিং কালে দলীয় নেতৃত্ব সম্পর্কে ‘বেফাঁস’ কিছু বলে বিতর্কে জড়াননি। কিন্তু বেশ কিছু বিধায়কের গতিবিধি প্রশাসনিক স্তরে ‘অন্য রকম’ বার্তা নিয়ে এসেছে। তার জেরেই নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। এক দিকে দলীয় বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং, তার পাশাপাশি প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

    সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে সরকার ও শাসক দল পরিচালনার কেন্দ্র নবান্ন ও ক্যামাক স্ট্রিটের মধ্যে ভাগ হয়ে থেকেছে। এখন আবার নবান্নের পাশাপাশি প্রশাসনিক ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে ভবানী ভবন। প্রশাসনের একটি সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ এবং জায়গা মতো সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা ধরা পড়ছিল। সাম্প্রতিক রদবদলে সিআইডি-র প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর হাতেই ছিল গোয়েন্দা-তথ্যের মূল ভার। এই প্রক্রিয়া এবং শাসক দলের অন্দরের চলতি সমীকরণ এক সূত্রে বাঁধা বলেই প্রশাসনের একটি মহলের মত।

    ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে আমতলায় চিকিৎসকদের নিয়ে সম্মেলনের পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, স্থিতাবস্থা নয়, তিনি ‘চ্যালেঞ্জ’ পছন্দ করেন। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি ফের জানিয়েছিলেন, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনেই তিনি স্বচ্ছন্দ। সরকারি পদে তাঁর মোহ নেই। তবে প্রশাসনের ওই মহলের মতে, ‘স্থিতাবস্থা ও চ্যালেঞ্জ’ সংক্রান্ত মন্তব্য গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এবং তার পরেই নজরদারির প্রক্রিয়া আটোসাঁটো করা হয়েছে।

    প্রশাসনিক সূত্রই বলছে, কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘স্পর্শকাতর’ হয়ে থাকায় লাগোয়া এই রাজ্যে কোনও অস্থিরতা চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। নরেন্দ্র মোদীদের এই মনোভাবও আপাতত তৃণমূল নেত্রীর শক্ত হাতে হাল ধরার জন্য অনুকূল হয়েছে। তৃণমূলের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির কোনও অংশ ভিন্ন কোনও পরিকল্পনায় এগোবে, এমন পরিস্থিতি তৈরি করা আপাতত কঠিন। সেই সুযোগে ঘর গুছিয়ে রাখতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। শাসক দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দল বড় হয়েছে, সব স্তরে ক্ষমতায় রয়েছে। নানা রকম পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়ই। তবে কর্তৃত্ব নেত্রীর হাতেই রয়েছে, এই নিয়ে কারও কোনও সংশয় না থাকাই ভাল!’’

    হাওয়া বুঝে মমতাও লক্ষ্য পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘কোনও হয়তো নেই! বাংলার মানুষকে আমি চিনি, সম্মান করি। মানুষের রায়ে আমরাই ২০২৬ সালে আবার সরকার গড়ব।’’ যার মধ্যে অন্তর্নিহিত বার্তা আছে— ‘বেচাল’ করে লাভ নেই!

  • Link to this news (আনন্দবাজার)