• প্রমাণ লোপাট-তত্ত্ব প্রমাণে ‘অস্ত্র’ চিকিৎসকের বয়ান
    আনন্দবাজার | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক পড়ুয়ার বাড়িতে ফোনের অডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল অনেক আগেই। ৯ অগস্ট সকালে ওই ফোন-পর্ব থেকেই আর জি করের খুন, ধর্ষণের ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর ছক কষা হয়ে গিয়েছিল বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি উঠে আসছে। তবে তদন্তকারীদের দাবি, ময়না তদন্তের সময়ে কারও কারও ইচ্ছা থাকলেও উপস্থিত এক ডাক্তারের আপত্তিতে ওই পড়ুয়া চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁরা লিখতে পারেননি। তবে ময়না তদন্তে বেশ কিছু খামতি শেষ পর্যন্ত থেকেই যায়।

    সিবিআইয়ের দাবি, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ আইনজীবী থেকে পুলিশকর্তা ও নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের ভূমিকা গোলমেলে। ৯ অগস্ট সকালে আর জি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগে ডাক্তার ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হতেই অত্যন্ত পাকা মাথার পরিকল্পনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের খেলা শুরু হয়ে যায় বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। সিবিআই সূত্রে অভিমত, ময়না তদন্তের পর্যায়েও সেই অপচেষ্টা দেখা গিয়েছে। তবু ময়না তদন্তের রিপোর্টে খুন, ধর্ষণের বিষয়টি পুরোপুরি ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত পর্যন্ত ঘটনাক্রমের ছবিটা দীর্ঘ তদন্তে এখন স্পষ্ট সিবিআইয়ের কাছে।

    সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, তদন্তে জানা গিয়েছে, নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার সহপাঠীদের চাপে ময়না তদন্তের জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য ভবনের তরফেও ওই বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাতে আর জি করের দু’জন ময়না তদন্ত বিশারদ চিকিৎসক ছিলেন। এ ছাড়া শহরের অন্য সরকারি হাসপাতালের ময়না তদন্তকারী এক চিকিৎসককেও বোর্ডে রাখা হয়। সেই চিকিৎসক ছিলেন অনেকটাই অনভিজ্ঞ। ফলে ভাবা গিয়েছিল, অন্য চিকিৎসকেরা ছড়ি ঘুরিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুরোপুরি প্রভাবিত করবেন। পরে ময়না তদন্তে বেশ কিছু গুরুতর ত্রুটির আভাসও পেয়েছে সিবিআই। কিন্তু খুন, ধর্ষণের ঘটনাটি একেবারে ধামাচাপা দেওয়া যে যায়নি, তার নেপথ্যে এক জন ডাক্তারের আপত্তি কার্যকর হয়েছিল বলেজানা গিয়েছে।

    সিবিআইয়ের তদন্তকারী এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে এক চিকিৎসক বেঁকে বসেন। এটা কোনও ভাবেই আত্মহত্যার ঘটনা নয় বলেও মতামত দেন।’’ শুধু মতামতই নয়। সিবিআই সূত্রে দাবি, নিজের মোবাইলে মৃতদেহের কাছ থেকে পর পর ক্ষতচিহ্নের ছবি তুলতে থাকেন অপূর্ব বিশ্বাসের সহকারী দুই ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের মধ্যে এক জন। ময়না তদন্তের রিপোর্টে তিনি ছবিতে তোলা মৃতদেহের আঘাতের চিহ্নগুলির উল্লেখ করবেন বলেও জানিয়ে দেন।" তদন্তে উঠে এসেছে, এর পরই ময়না তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। তড়িঘড়ির ময়না তদন্তে বেশ কিছু খামতি রাখা হয় বলেও সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। তবু পরিকল্পনামাফিক খুন, ধর্ষণের ঘটনাটি ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

    তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘ময়না তদন্তের সময়ে রুখে দাঁড়ানো ওই চিকিৎসক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাঁর মোবাইলে তোলা মৃতদেহের ছবি দেখান। ওই সব ছবি তাঁর কাছ থেকে নিয়ে তার ফরেন্সিক পরীক্ষাও করানো হয়েছে।’’ চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের মামলার তথ্য প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় ওই ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

    সিবিআই সূত্রে খবর, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার তোড়জোড় চলছে। এই মামলায় আরও একাধিক সাপ্লিমেন্টারিচার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)