সোমবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে ‘বড় দুর্ঘটনা’র ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করতে হবে। রাজ্যকে ওই পরামর্শ দেওয়ার সময় বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সব আইনজীবীর কাছে আমার পরামর্শ, দয়া করে প্রথমে ওই সংক্রান্ত (বড় দুর্ঘটনা) বিষয়ে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করতে বলুন। এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’’ হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান অনেকে। তাতে কারও প্রাণহানি হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয় না। ছোট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। পুলিশকে বিচারপতির নির্দেশ, নতুন ধারা যোগ করতে হবে।
পথদুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সঠিক ভাবে পুলিশ তদন্ত করছে না। ওই অভিযোগে হাই কোর্টে মামলা করেন হাওড়ার জনৈক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে তাঁর ছেলেকে চাপা দেন চালক। অথচ পুলিশ সাধারণ মামলা দায়ের করে তদন্ত করছে। ওই মামলার শুনানিতে পুলিশকে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করতে বলল হাই কোর্ট।
বস্তুত, মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর সময়ে পুলিশ ধরলে জরিমানা দিতে হয়। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করাতে পারে পুলিশ। তাতে ছ’মাস থেকে দু’বছর পর্যন্ত কারাবাসও হতে পারে। একই সঙ্গে জরিমানাও দিতে হয়। চালক কতটা পরিমাণে পান করে গাড়ি চালাতে পারবেন তা-ও নির্দিষ্ট করা রয়েছে ভারতীয় ট্র্যাফিক আইনে। ওই আইনের ১৮৫ ধরায় বলা রয়েছে যদি ১০০ গ্রাম রক্তে ৩০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত অ্যালকোহল থাকে তবে সেটা দণ্ডনীয় নয়। এর উপরে হলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। এই নিয়ম দুই, তিন, চার— সব চাকার গাড়ির ক্ষেত্রেই এক। আইনে আরও একটি বিষয় রয়েছে। প্রথম বার কেউ অতিরিক্ত মদ্যপান করে গাড়ি চালালে সাজা ও জরিমানা কম। দু’হাজার টাকা এবং ছ’মাসের কারাবাস। কিন্তু একাধিক বার হয়ে গেলে জরিমানা তিন হাজার টাকা। কারাদণ্ড হতে পারে দু’বছর পর্যন্ত। কলকাতা-সহ রাজ্যে পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই দেখা যায় চালক মত্ত ছিলেন। পুজোর সময়ে যাতে এমনটা না হয় তার জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার শুরু হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাস্তায় এবং বিশেষ করে চেক পোস্টে পুলিশ ‘ব্রেথালাইজ়ার যন্ত্র’ নিয়ে থাকবে। সেই যন্ত্রে ফুঁ দিলে বোঝা যায় রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ কত। সেটা ৩০ মিলিগ্রামের বেশি হলেই তা দণ্ডনীয়। পুলিশ গাড়িও আটকে রাখতে পারে।