• কিষান মান্ডিতে দালালচক্র কড়া ব্যবস্থা নবান্নের
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কিষাণ মান্ডিতে ফড়েদের দাপট রুখতে তৎপর রাজ্য সরকার। ধান বিক্রির লাভ যেন চাষিরাই পান, তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকদের মান্ডিতে ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। কতটা ধান কেনা হচ্ছে, কতটা ধান চাষিরা নিয়ে আসছেন, সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কিষাণ মান্ডিতে বহিরাগত কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। সম্প্রতি নদীয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ নাকাশিপাড়া ব্লকের কিষাণ মান্ডি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও নিয়মিত ধান ক্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যাচ্ছেন। সোমবার বিকেলে কালীগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের তৎপরতায় কিষাণ মান্ডি থেকে ফড়ের ধান বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বলাবাহুল্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। নদীয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। চলতি বছরে তিন লক্ষ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ধান কিনবে নদীয়া জেলা খাদ্যদপ্তর। নদীয়ার জেলাশাসক বলেন, ‘ধান ক্রয় কেন্দ্রে প্রশাসনের আধিকারিকরা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন। যাতে বাইরের কেউ চাষিদের লভ্যাংশে ভাগ না বসাতে পারে।›


    কিষাণ মান্ডিতে ফড়েদের দাপট নতুন নয়। নদীয়াতেও ধান কেনা শুরু হতেই ফড়েরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সরকার ও চাষিদের মধ্যে ধান কেনাবেচায় মধ্যসত্ত্বভোগীরা যাতে সুবিধা না পায় তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। 


    কৃষক বন্ধু উপভোক্তার নিরিখে ধান বিক্রি করতে আসা রেজিস্টার্ড ও সক্রিয় চাষির সংখ্যা অনেকটাই কম। ধান কেনার ব্যাপারে এই ধরনের চাষির সংখ্যা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ অনেক সময়ে চাষিরা প্রত্যন্ত এলাকায় ফড়েদের কাছে অল্প দামে ধান বিক্রি করে দেয়। পাশাপাশি ধান কেনা নিয়ে জেলাশাসকদের নিয়মিত বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটিতে আটকে থাকা রাইস মিলের আবেদনগুলো দ্রুত অনুমোদন দিতে বলা হয়েছে‌ নবান্ন থেকে। পাশাপাশি খাদ্যদপ্তরকেও মান্ডিগুলোতে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‌


    সোমবার কালীগঞ্জ ব্লকের দেবগ্রাম কিষাণ মান্ডিতে অভিযানে যান ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। উপস্থিত ছিলেন ব্লকের বিডি অঞ্জন চৌধুরী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেফালি খাতুন, থানার শীর্ষ আধিকারিক সঞ্জয়কুমার রায় সহ থ্রি ম্যান কমিটির সদস্যরা। প্রশাসনের চোখে দালাল সক্রিয়তার বিষয়টি ধরা পড়ে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভিন জেলা থেকে একটি ছোট লরিতে করে প্রায় চল্লিশ কুইন্টাল ধান এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে জানা যায়, সেই ধান পূর্ব বর্ধমান থেকে আনা হয়েছে। বলাবাহুল্য, ফড়েরাই সেই ধান কালীগঞ্জের কিষান মান্ডিতে আসে। বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেবগ্রামের কিষাণ মান্ডিতে অভিযানে গিয়েছিলাম। সেখানে সন্দেহজনক একটি ছোট লরি দেখতে পাই। সেই লরিতে ধান ছিল। কিন্তু চাষি ছিল না। তৎক্ষণাৎ আমরা সেই ধান বাজেয়াপ্ত করেছি।› নদীয়া জেলার রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমন ঘোষ বলেন, ‘ফড়েমুক্ত মান্ডি গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে চাষিরা উপকৃত হবেন।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)