• পড়ুয়া মাত্র ১, কালনায় প্রাথমিক স্কুল রক্ষায় হ্যান্ডবিল হাতে পাড়ায় ঘুরছেন শিক্ষিকারা
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কালনা: স্কুলে ‘সবে ধন নীলমণি’ মাত্র একজন পড়ুয়া। চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্র এবার অন্য স্কুলে চলে যাবে। স্কুল টিকিয়ে রাখতে কালনা শহরের জাপট জিএসএফপি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন। অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন। হ্যান্ডবিলও বিলি করেছেন। তাতে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য ইতিমধ্যে ১০জন পড়ুয়া জোগাড় হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই তাদের নিয়ে পঠনপাঠন শুরু করে দিয়েছেন শিক্ষিকারা। শিক্ষিকাদের এই উদ্যোগে খুশি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক থেকে এলাকার অভিভাবকরা। শহরের আরও দু’টি স্কুল যোগীপাড়া জিএসএফপি ও ফটকদ্বার চত্বরের কালনা জিএসএফপি বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার অভাব দেখা দিয়েছে। কোথাও দু’জন, কোথাও চারজন পড়ুয়া রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।


    আগে কালনা শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে ৩৫টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল ছিল। ছাত্রের অভাবে তিনটি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন শহরে ৩২টি  প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে চারটি স্কুলে দশজনের নীচে পড়ুয়া ছিল। প্রত্যেক স্কুলে দু’জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। অথচ ভিন্ন চিত্রও দেখা যায় শহরের কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে। এই শিক্ষাবর্ষে কালনা অম্বিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০৮, মহারাজা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৩২, হিন্দু বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫০জন পড়ুয়া ছিল।  কালনা এফপি স্কুলে ২৪১, নিগমানন্দ প্রাথমিক স্কুলেও ১৯৯জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। যেসব প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে বা তলানিতে ঠেকেছে তারজন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিকতাকেই দায়ী করছেন এলাকার বাসিন্দারা। 


    জাপট জিএসএফপি বিদ্যালয়টি ১৯৫১সালে স্থাপিত হয়। দোতলা ভবন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ থাকা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছর ধরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। চলতি শিক্ষাবর্ষে চতুর্থ শ্রেণিতে মাত্র একজন পড়ুয়া ছিল। গত সেপ্টেম্বরে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে আসেন পূর্ণিমা সমাদ্দার। এছাড়া আরও এক সহ শিক্ষিকা রয়েছেন। প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে পড়ুয়া বাড়ানোর দিকে নজর দেন। হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে সহ শিক্ষিকা ও শিক্ষাবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পড়ুয়া জোগাড় করতে থাকেন। অভিভাবকদের বোঝান, অন্যান্য স্কুলে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় এখানেও সব মিলবে। স্কুলপোশাক থেকে মিড ডে মিলও হবে। এছাড়াও ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রধান শিক্ষিকা নিজের ব্যয়ে স্কুলড্রেস তৈরি করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। তাতেই কাজ হয়। অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুলে পাঠানো শুরু করেন। বর্তমানে ১০জন পড়ুয়া স্কুলে আসছে। তারাই নতুন শিক্ষাবর্ষে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হবে বলে অভিভাবকরা জানিয়ে দিয়েছেন।


    প্রধান শিক্ষিকা বলেন, স্কুলে এসে দেখি, চতুর্থ শ্রেণিতে একজন মাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র রয়েছে। সেও পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অন্যত্র চলে যাবে। স্কুল পড়ুয়াশূন্য হয়ে যেত। তাই পড়ুয়া খুঁজতে পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। অভিভাবকদের বোঝাচ্ছি। ১০জন পড়ুয়া পেয়েছি। আশা করি, আরও কিছু পড়ুয়া আমরা পাব। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রধান শিক্ষিকার আন্তরিক আহ্বানে কাজ হচ্ছে। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রুমা ঘোষ বলেন, জাপট জিএসএফপি বিদ্যালয় নতুন শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া শূন্য হয়ে যেত। নতুন শিক্ষাবর্ষে বেশ কয়েকজন পড়ুয়ার অভিভাবক ভর্তির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানতে পারছি। আরও দু’-তিনটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে পড়ুয়া বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হন তাও দেখা হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)