• গভীর রাতে তীব্র বিস্ফোরণ সাগরপাড়ায় মৃত ৩
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: রবিবার রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল  মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়ার খয়েরতলা এলাকা। ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম সাকিরুল সরকার(২৯), মামন মোল্লা(২১) ও মুস্তাকিন শেখ (৩৫)। তারা সকলেই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে দাবি পুলিসের। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ মামনের বাড়িতেই বিস্ফোরণ হয়। তার একতলা পাকা বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে ছাদ সহ বাড়ির দু’টি ঘর সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে বোমা বাঁধার সময় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে অনুমান পুলিসের। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিস। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিস মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরজনকে মৃত অবস্থায় পুলিস উদ্ধার করে। পুলিস ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে। সেখান থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ঘটনার পর এদিন বিএসএফের তৎপরতাও লক্ষ্য করা গিয়েছে।


    অতিরিক্ত পুলিস সুপার(লালবাগ) রাসপ্রিত সিং সোমবার সকালেই সাগরপাড়ায় পৌঁছন। তিনি বলেন, খয়েরতলায় বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘর পুরো বন্ধ ছিল। তাই বিস্ফোরণের প্রভাব বেশি পড়েছে। আমাদের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ওই জায়গা খতিয়ে দেখেছে। বোমা তৈরির আগেই এটা হয়েছে বলে আমাদের অনুমান। বেশ কিছু জিনিস আমরা উদ্ধার করেছি। সেগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। মঙ্গলবার ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে আসছে। কী কারণে বোমা বাঁধা হচ্ছিল, আমরা তদন্ত করে দেখছি। 


    এদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়,বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় ১৫০মিটার দূরেও ছড়িয়ে রয়েছে বাড়ির জানালার কাচ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ছাদ ও বাড়ির কার্নিশের ঢালাই সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। আসবাবপত্র সহ বাড়ির যাবতীয় সামগ্রী লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দরজা, জানালা ছিটকে এসে বাইরে পড়ে। তীব্র শব্দে প্রায় দু’কিমি এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের আতঙ্কে রাতে গোটা গ্রাম নিদ্রাহীন কাটিয়েছে। 


    স্থানীয় বাসিন্দা ইয়ারুদ্দিন শেখ ও ইসলাম মণ্ডল বলেন, আমরা তখন সবাই শুয়ে পড়েছিলাম। ১১টা নাগাদ তীব্র আওয়াজে ঘুম ভাঙে। ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে বাড়ি ঘর। তারপর জানতে পারি, বিস্ফোরণ হয়েছে। 


    সকাল থেকে সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ওই ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষা করে বিস্ফোরণের নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁদের অনুমান, শক্তিশালী কোনও বিস্ফোরক এনে বোমা বাঁধার কাজ শুরু হতেই বিস্ফোরণ ঘটে। কারণ বোমা তৈরির বেশ কিছু উপকরণ পাওয়া গিয়েছে। তবে তৈরি বোমা ফাটলে যে স্প্লিন্টার ও বোমার খোল পাওয়া যায়, তা উদ্ধার হয়নি বলে বম্ব স্কোয়াডের আধিকারিকরা জানিয়েছেন।


    গ্রামবাসীদের দাবি, মামন গত কয়েক বছর ধরে কেরলে কাজ করত। কয়েক মাস আগে সে গ্রামে ফেরে। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় পাশের গ্রামে বাপেরবাড়িতে ছিল। সেই সুযোগে সাকিরুল ও মুস্তাকিনকে বাড়িতে এনে বোমা তৈরি করবে বলে পরিকল্পনা করে। সাকিরুলের নরসিংপুর বাজারে কাপড়ের দোকান আছে। সে কাশির সিরাপ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। মুস্তাকিনের বাড়ি সাগরপাড়ার মাহাতাব কলোনি এলাকায়। সেও চোরা কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে পুলিস জানিয়েছে।স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগের তুলনায় ওই এলাকায় বোমাবাজি-সন্ত্রাস একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় সীমান্তে দু’নম্বরি ব্যবসা নিয়ে কোনও ঝামেলার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পুলিস প্রশাসনকে বারবার বোমা বারুদ উদ্ধারের জন্য বলছেন। কিন্তু, এখানে পুলিস সেসব কাজ করে না।  ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহে পুলিস। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)