নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: প্রকল্পের কাজে চাই কমিশন। নির্দিষ্ট ‘পার্সেন্টেজ’ না দিলে কাজ শুরুই করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার জেরে জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচে রাজ্যের মধ্যে একেবারে শেষে দিকে রয়েছে পুরুলিয়া। অর্থ কমিশনের প্রায় ১১৫কোটি টাকা এখনও পড়ে রয়েছে জেলায়! উন্নয়নের কাজে এই গড়িমসি দেখে ব্যাপক ক্ষুব্ধ নবান্ন।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মোট প্রায় ২২৩কোটি লক্ষ টাকা পেয়েছে পুরুলিয়া জেলা। এরমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে ১৪২কোটি ৬৪লক্ষ টাকা, পঞ্চায়েত সমিতি ৩০কোটি এবং জেলা পরিষদ ৫০কোটি ৬৫লক্ষ টাকা পেয়েছে। এরমধ্যে খরচের নিরিখে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে জেলা পরিষদ। মোট প্রাপ্য টাকার মাত্র ১৫কোটি ৮১লক্ষ আটক খরচ করতে পেরেছে জেলা পরিষদ। ৬৯শতাংশ টাকা এখনও পড়েই রয়েছে। কাজে গতি আনতে গত শুক্রবার সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক রজত নন্দা। বৈঠকে উপস্থিত এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘টাকা কেন পড়ে রয়েছে, তা ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ারের থেকে জানতে চান জেলাশাসক। কিন্তু, তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।’ এত টাকা কেন পড়ে রয়েছে? জেলা পরিষদের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, জেলা পরিষদের কিছু আধিকারিক, জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ‘আঁতাত’ রয়েছে একশ্রেণির ঠিকাদারদের। কাজের বিনিময়ে ঠিকাদারদের দিতে হয় মোটা টাকা কমিশন। কে কোন কাজ করবে, তা ঠিক করে দেন গুটিকয়েক জনপ্রতিনিধিই। তবে, সরকারি খাতায় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা দেখানোর জন্য তিনজন ঠিকাদারকে দিয়েই টেন্ডার ড্রপ করানো হয়। যদিও কে কত টাকায় টেন্ডার ড্রপ করবে, তা আগে থেকেই ঠিক থাকে। তিনজনের বাইরে যদি কোনও ঠিকাদার দরপত্র জমা দেন, তাহলে তা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে মাসের পর মাস পার হয়ে গেলেও দেওয়া হয় না ওয়ার্ক অর্ডার। খরচ হয় না অর্থও! সেই কারণেই রাজ্যের রিপোর্টে পিছিয়েই থাকে পুরুলিয়া জেলা।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, মাসখানেক ধরে জেলা পরিষদের টাকা খরচে বিন্দুমাত্র গতি নেই। ছ’মাস আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও সেই কাজ শুরু হয়নি এখনও। বহু কমিউনিটি হল, রাস্তার কাজ এভাবে আটকে রয়েছে। কাজের ওয়ার্ক অর্ডার কিংবা লেআউট না পেয়ে কয়েক সপ্তাহ আগেই অন্তত ৩০জন ঠিকাদাররা জেলা পরিষদে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। যদিও তাতেও কোনও কাজ হচ্ছে না। কেন? ওই ঠিকাদারদের যুক্তি, যত টাকার কাজ, তার ১০শতাংশ টাকা কমিশন চাইছে। এভাবে বহু কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না, বহু কাজ আবার মাঝপথে আটকে রয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, টেন্ডার প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি পরিচালনা করছেন জেলা পরিষদের বর্ষীয়ান এক জনপ্রতিনিধি এবং এক মহিলা জনপ্রতিনিধির স্বামী। তাঁদের জন্যই রাজ্যের কাছে জেলার ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বলে খবর। এনিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ মহলে অভিযোগও পৌঁছেছে বলে খবর। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ অর্থ খরচ না হওয়ায় ওইদিনের বৈঠকে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলাশাসকও। বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও অজুহাতই তিনি আর শুনবেন না।