জলপাইগুড়িতে শিল্পপার্ক, প্রস্তাব সিনার্জিতে, ৩ জেলায় ৯০০ কোটি বিনিয়োগ
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: উত্তরের তিন জেলায় শিল্পে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে চলেছে। সোমবার ডুয়ার্সের বাতাবাড়িতে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলা নিয়ে আয়োজিত সিনার্জিতে বিনিয়োগের ওই প্রস্তাব জমা পড়ে। মূলত বহুমুখী হিমঘর, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চা-পর্যটন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে ওই বিনিয়োগ হবে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গের এই তিনটি জেলায় শিল্পস্থাপনে ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
জলপাইগুড়ি জেলায় মোট দেড়শো একর জমিতে সাতটি শিল্পপার্ক তৈরি হচ্ছে। দু’টি শিল্পপার্ক চালু হয়ে গিয়েছে। প্রকল্পের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী সেগুলিতে আর্থিক সহায়তা করেছে রাজ্য। আরও তিনটি শিল্পপার্ক চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এই শিল্পপার্কগুলিতে সবমিলিয়ে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মসংস্থান হতে পারে প্রায় সাত হাজার মানুষের। ডাবগ্রাম শিল্পপার্কের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শেষের মুখে। প্রায় ৯ একর জমিতে ২৮ কোটি ব্যয়ে গড়ে উঠেছে ওই পার্ক। ওই শিল্পপার্কে চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের কাজও হবে। আমবাড়ি-ফালাকাটায় ১১৮ একর জমিতে শিল্পপার্ক রয়েছে। এখানে ৪৭ একর জমিতে ১৭ কোটি ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই অংশের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলতি বছরেই শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের ধলপাল-২ পঞ্চায়েতের অধীনে ব্রাউন রাইস উৎপাদনকারী সমবায় সমিতিকে সরঞ্জামের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আলিপুরদুয়ারের শিবনাথপুরে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ ‘আরেকা লিফ প্লেট’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে এক কোটি ৭ লক্ষ টাকা। ২৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তফসিলি জাতি উপজাতিভুক্ত ২৫০ মহিলা এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার মিলিয়ে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২৯৯৪টি লোনের আবেদন মঞ্জুর করেছে ব্যাঙ্ক। অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ৫৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা।
শিল্পস্থাপনে ছাড়পত্র পেতে চলতি আর্থিক বছরে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার মিলিয়ে ৪৮০টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। উত্তরের এই তিন জেলায় গত বছর ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে ৫ হাজার ২৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাঙ্ক। চলতি আর্থিক বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে এমএসএমই সেক্টরে ৩৭৬৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট তিন জেলা।
প্রশাসনের দাবি, চলতি মাস পর্যন্ত জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার মিলিয়ে তিন জেলায় নথিভুক্ত ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের সংখ্যা ৯২ হাজার ৬৭টি। এই তিন জেলায় ‘বাংলাশ্রী ইন্সেটিভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০১টি ইউনিটকে অনুদান দেওয়া হয়েছে ২৬ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। বাতাবাড়িতে আয়োজিত সিনার্জিতে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। - নিজস্ব চিত্র।