সংবাদদাতা, হবিবপুর: ‘পরকীয়ার’ অভিযোগে সালিশি সভায় বসার নামে দুষ্কৃতীদের নিয়ে মারধর ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল বুলবুলচণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের সচিব সুদীপ্ত সিনহার বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হবিবপুর ব্লকের সোলাডাঙা এলাকায়। রাতেই বিশাল পুলিস বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে পঞ্চায়েতে টেন্ডার দুর্নীতির ঘটনায় গ্রাম পঞ্চায়েতের শিল্প ও পরিকাঠামো উপ সমিতির সঞ্চালক রাজীব মণ্ডলের মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানোর বিষয়টিও। এদিন দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত পেশায় উকিল মিঠুন সরকার সম্পর্কে রাজীবের ভগ্নিপতি।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মৃধার সঙ্গে এলাকার এক মহিলার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সেই মহিলা সম্পর্ক ভেঙে সুদীপ্তর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কিছুদিন আগে এনিয়ে স্বপন ও সুদীপ্তর বাদানুবাদ হয়েছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজীব মণ্ডলের বাড়িতে স্বপনকে মীমাংসায় বসার জন্য বলেন সুদীপ্ত। সেইমতো রাজীবের ভগ্নিপতি মিঠুনের কাছে মীমাংসাপত্র নিতে যান স্বপন। সেই সময় মিঠুন তাঁর শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ রাজীবদের বাড়িতেই ছিলেন। সেখানে স্বপনকে দাঁড়াতে বলেন তিনি। এরপর হঠাৎ সুদীপ্ত ৫০ থেকে ৬০ জনের বহিরাগত সশস্ত্র দুষ্কৃতীকে নিয়ে উপস্থিত হয় বাড়ির সামনে। স্বপনকে বাইরে ডেকে কথা বলতে বলতে বেধড়ক মারধর শুরু করে তারা। রাজীবের বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরায় বন্দুক হাতে সুদীপ্তর হামলার ঘটনা ধরা পড়েছে। দেখা যাচ্ছে সুদীপ্ত বন্দুক তাক করেছেন স্বপনের দিকে। তাঁর সঙ্গীরাও লাঠি ও লোহার রড নিয়ে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ।
মিঠুন বলেন, মারধরে বাধা দিলে সুদীপ্ত পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখায় ও হুমকি দিচ্ছিল। মারধর করার পর আমাকে তাড়া করলে প্রাণ বাঁচাতে কোনওক্রমে বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। দুষ্কৃতীরা স্বপনকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। বেশ কিছুদূর নিয়ে গিয়ে রাস্তাতে ফেলে চলে যায় তারা।
সম্প্রতি বুলবুলচণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল সহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন রাজীব। সেই রাগের বশেই কি বাড়িতে হামলা? মিঠুন বলেন, প্রথমবার হামলার ঘটনার কিছুক্ষণ পর ফের সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা শ্বশুরবাড়িতে তাণ্ডব চালায় এবং হুমকি দেয় বুলবুলচণ্ডী পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিস, তোকে দেখে নেব। শহরে এলে প্রাণে মেরে ফেলব।
এপ্রসঙ্গে রাজীবের মন্তব্য, টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিলের বিষয়ে সরব হওয়ার কারণেই পরিকল্পনা করে এই হামলা করা হয়েছে। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।
যদিও হামলার বিষয়ে জানতে সুদীপ্তর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে সুইচড অফ ছিল। মেসেজ করা হলেও প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি।
সোমবার ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে আদালতে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হবিবপুর থানার পুলিস। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে গন্ডগোলের ছবি।