‘ওরা দখল করবে, আমরা কি ললিপপ খাব?’ বাংলাদেশের হুমকিতে বিস্ফোরক মমতা
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। রোজ সামনে আসছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা। সেই সঙ্গে হুমকি—‘বাংলা, বিহার, ওড়িশা দখল করে নেব।’ ওপার থেকে আসা সেই হুমকির জোরালো ভাষায় জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এত বড় হিম্মত শুধু আপনাদের কেন, কারওই নেই! আপনারা দখল নেবেন, আর আমরা কি বসে বসে ললিপপ খাব? আমরা যথেষ্ট সচেতন ও সক্রিয় নাগরিক। তবে আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিই। মানুষকে রক্ষা করব।’
এদিন বিধানসভার প্রথমার্ধে উল্লেখ পর্ব শেষ হতেই বাংলাদেশ নিয়ে বিবৃতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সোমবারও তিনি বিধানসভায় বাংলাদেশ নিয়ে সরব ছিলেন। এমনকী পদ্মপারে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বানও জানান। তাঁর এই প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায় জাতীয় রাজনীতিতে। এদিনও বাংলাদেশ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মমতা। তবে একই সঙ্গে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে এপারে প্ররোচনা দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি না করার জন্য বারবার অনুরোধও জানান। তাঁর অভিযোগ, এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য এখানে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বিবৃতিতে প্রথমেই স্পষ্ট করে দেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যচার চলছে, সেটা আমরা কেউ ভালো চোখে দেখছি না। দাঙ্গা কখনও হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টানরা করে না। দাঙ্গা করে সমাজবিরোধীরা, যারা সমাজের বোঝা।’ সতর্ক গলায় বলেন, ‘বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে এখানে কোনও মন্তব্য করলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। এটা নিয়ে রাজনীতি করলে রাজ্যের ক্ষতি হবে। ওখানে যে বন্ধু বান্ধবরা আছেন তাঁদেরও ক্ষতি হবে।’ কোনও নির্দিষ্ট দলের নাম না করলেও মমতার অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়ো ভিডিও ছড়াচ্ছে। তাঁর সমালোচনা থেকে রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমের একাংশও।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কোনও উস্কানি না দিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ মেনে চলার কথা বলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে, তার প্রতিবাদ সবাই করছেন। ইমামরা প্রতিবাদ করেছেন। এখানে সংখ্যালঘুরা এই ইস্যুতে প্রতিবাদ মিছিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গোলমালের আশঙ্কা থাকায় তাতে সায় দিইনি।’ আসলে ওপারের পরিস্থিতির কারণে এরাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সামগ্রিক ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আস্থা রাখার কথা গত সোমবারই মমতা বলেছিলেন। এদিনও তাঁর গলায় ছিল একই সুর। বিবৃতিতে উঠে এসেছে সীমান্তে বাংলাদেশিদের ভিড়-যাতায়াতের প্রসঙ্গ। যদিও মমতা জানিয়েছেন, বিষয়টি বিএসএফের দেখার বিষয়। বিদেশ সচিবের বাংলাদেশ সফর সফল হবে বলেও এদিন আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশে দ্রুত শান্তি ফিরবে।
এদিন বিধানসভা ভবনে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে রাজভবনে গিয়ে দেখা করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে। উভয় বৈঠকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে বলে খবর।