মালদহের বৈষ্ণবনগর থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত। তার মধ্যেই চলছিল চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি। গত ২০২৩ সালে কলকাতা পুলিসের নিয়োগ পর্বে আবেদন করে লিখিত সহ যাবতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরিফুল ইসলাম এখন সাব ইনসপেক্টর। কলকাতা পুলিস বা রাজ্য পুলিসে সাম্প্রতিক অতীতে এ এক বিরল নজির বলেই মানছে সংশ্লিষ্ট মহল।
ট্রেনিং শেষে মালদহের মালতিপুরের শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন এই সিভিক ভলান্টিয়ার বর্তমানে কলকাতার একবালপুর থানায় কর্মরত। বিশেষ সূত্রে খবর, ২৭ নভেম্বর পাসিং আউট প্যারেড শেষে সরিফুল এখন থানায় সিনিয়র অফিসারদের কাছে হাতে-কলমে কাজ শিখছেন। এক বছর কাজ শেখার পর মিলবে ফাইনাল পোস্টিং।
মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগর থানায় সরিফুলের এক সময়ের সহকর্মীরা কথায় কথায় জানালেন, ‘ঠিক এক বছর আগের কথা। কলকাতা পুলিসে এসআই পদে চাকরি পাওয়ার পর সিভিকের চাকরি ছেড়ে দেয় সরিফুল। তবে বরাবর ও খুব পরিশ্রমী। জীবনে তারই দাম পেল ছেলেটা। সত্যি কথা বলতে সরিফুল আমাদের গর্ব।’
কলকাতা পুলিসের ট্রেনিং একাডেমিতে এক বছর ধরে যারা সরিফুলকে সিভিক থেকে পুলিস অফিসার হিসেবে গড়েপিটে নিয়েছেন, তাঁদের একজনের কথায়, ‘মালদহ পুলিসের সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে কলকাতা পুলিসের এসআই—এই উত্তরণটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। নিতান্তই পেটের দায়ে একটা সময় সিভিকের চাকরি করতে হয়েছে সরিফুলকে। সিভিকের উর্দি গায়ে ওঠা মানেই সমাজের চোখে ভিলেন-মার্কা একটা ভাবমূর্তি। আর জি কর পরবর্তী সময়ে যা আরও বেড়েছে। প্রতিদিন ডিউটি যাওয়া মানেই উঁচুতলার পুলিসের অবহেলা-তাচ্ছিল্যের পাশাপাশি জনতার হাজার কটুক্তি—সব সহ্য করতে করতে ছেলেটা মানসিকভাবে কার্যত দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল! সেই অবস্থার সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে সবার সামনে মেলে ধরতে পারে যে বা যাঁরা, তাঁরাই সরিফুল হয়।’ অত্যন্ত সহজ-সরল এবং প্রাণবন্ত সরিফুল নিজেকে আড়ালে রাখতেই পছন্দ করে। সরিফুলের কথায়, ‘একটু কাজ শিখি, তারপর না হয় সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হব।’