সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা: পলেস্তরা খসে পড়েছে বহু আগেই। মাথাচাড়া দিয়েছে বট, অশ্বত্থ, নানা জংলি গাছ, মায় বুনো ঘাসও। ভগ্নপ্রায় শরীরজুড়ে বেরিয়ে থাকা লালচে ইটের উপর দিয়ে নেমে এসেছে বটের ঝুরি। এক ঝলকে দেখলে মনে হবে, কালের করাল স্রোতে তলিয়ে যেতে যেতে প্রাণপনে মাথা তুলে বাঁচতে চাইছে বাড়িটা। নামেই বাড়ি। ইতিহাসের ভাষ্যমতে, যা আসলে বাংলো। ব্রিটিশ আমলে এই বাংলোয় থাকতেন সস্ত্রীক লর্ড ক্যানিং। তাঁর সেই ভগ্নপ্রায় বাংলো ঘিরে ভিড় জমাচ্ছেন হবু দম্পতিরা। ইতিহাসের এক পর্বের সঙ্গে নিজেদের জীবনের আগামী অধ্যায়কে একসুতোয় গাঁথতে হাজির হচ্ছেন বাংলোর সামনে। প্রি-ওয়েডিং ফটোশ্যুটের জন্য।
ভারত নিয়ে ভালোবাসার অন্ত ছিল না লর্ড ক্যানিংয়ের। সেই রসায়নে অনুঘটকের কাজ করেছিল স্ত্রী শার্লটের সান্নিধ্য ও উৎসাহ। শোনা যায়, স্ত্রীর জন্মদিনের উপহার হিসেবে ‘লেডিকেনি’ তৈরি করান লর্ড ক্যানিং। ব্রিটিশ দম্পতির সেই ভালোবাসার সাক্ষ্য আজও জড়িয়ে ভগ্নপ্রায় বাংলোর শরীরজুড়ে। এই বাংলোকেই সাক্ষী রেখে নতুন জীবনের পথে হাঁটার ‘শপথ’ নিচ্ছেন হবু দম্পতিরা। চলছে নানান সাজে, বিভিন্ন পোজে ছবি তোলা। আর ভাঙা বাংলোর সামনে আচমকা এমন অচেনা ভিড় দেখে তাজ্জব স্থানীয় মানুষজনও।
গত কয়েক বছরে প্রি ওয়েডিং ফটোশ্যুট ধীরে ধীরে হবু দম্পতিদের ‘বাকেট লিস্টে’ উপরের দিকেই থাকে। এই বিশেষ ফটোশ্যুটের জন্য অধিকাংশই যান পাহাড়ে বা সমুদ্রে। কেউ কেউ খরচ কমাতে যান ভিক্টোরিয়া বা গঙ্গার ঘাটে। আর পকেটের জোর থাকলে লোকেশন হয় বিদেশের কোনও জনপ্রিয় স্থান। ঝাঁ চকচকে জায়গার মাঝে হবু দম্পতির ছবি যেন অন্য মাত্রা পায়। কিন্তু তা বলে ক্যানিংয়ের এই বাংলো! কেন এমন ‘আউট অব দ্য বক্স’ ভাবনা? এক হবু দম্পতির কথায়, ‘আমরা অনেকগুলি জায়গা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সবাই যা করে, তার থেকে আলাদ কিছু করার ইচ্ছে ছিল। সেই কারণে ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে এমন স্থাপত্যকে বেছে নিয়েছি। আসলে এই বাংলো কতদিন থাকবে জানি না। তাই ছবির মধ্যে দিয়ে নিজেদের স্মৃতির সঙ্গে জুড়ে নিলাম।’ ফটোশ্যুটের অপেক্ষায় বসে থাকা গড়িয়া থেকে আসা অপর এক যুগল জানালেন, এখন অনেকেই বিয়েতে ট্রেন্ড ভাঙছেন। আমরা না হয় প্রি ওয়েডিংয়ে ভাঙলাম।
ফি বছর শীত পড়লেই লর্ড ক্যানিংয়ের স্মৃতি বিজড়িত বাংলো দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক। আসেন ইতিহাসপ্রেমীরাও। ভগ্নপ্রায় দশা ও গাছগাছালির দাপটে ভিতরে ঢোকার সুযোগ নেই। তাই বাইরের চারপাশে ঘুরেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়। ইতিমধ্যে বাংলোটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হলেও তার সংস্কারের কাজ এখন প্রায় বন্ধই। স্থানীয়দের মতে, ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি সংস্কার করা হলে আরও বহু মানুষ আসতে উৎসাহী হবেন।