চুঁচুড়ায় সুডার কর্মীদের সাফাই কাজে বাধা পুর আন্দোলনকারীদের, চাঞ্চল্য
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: রাজ্য নগরোন্নয়ন পর্ষদের (সুডা) কর্মীদের দিয়ে শহরের জঞ্জাল সাফ করা উদ্যোগ নিলেও চুঁচুড়া পুরসভার এই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন আন্দোলনরত কর্মীরা। তাঁদের বাধায় সুডার কর্মীরা সাফাইয়ের কাজ শুরুই করতে পারলেন না। সোমবার সকালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় শহরে। অভিযোগ, সুডার কর্মীদের মারধর করেছেন আন্দোলনকারী অস্থায়ী কর্মীরা। জেলা খাদ্যদপ্তরের অফিস সংলগ্ন এলাকায় সুডার কর্মীরা আবর্জনা সংগ্রহ করে এক জায়গায় জড়ো করেছিলেন, আন্দোলনকারীরা সেইসব আবর্জনা ফের রাস্তায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হলে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। রবিবার পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সোমবারের হামলা ও সাফাইয়ের কাজ বানচাল হওয়ায় সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
ঘটনার পর এদিন হুগলি সদরের মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন সুডার কর্মীরা। তাঁরা বলেন, প্রশাসনের কর্তারা আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা না থাকায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে আমরা রাস্তায় নেমে কাজ করতে পারব না। এনিয়ে মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা বলেন, সুডার কর্মীদের বক্তব্য শুনেছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। অভিযোগ, অস্থায়ী পুরকর্মী আন্দোলনের নেতা রাধেশ্যাম শঙ্খবণিক এদিন নিজে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদিও রাধেশ্যাম বলেন, কাউন্সিলারদের একাংশ হুমকি দিয়ে সুডা কর্মীদের রাস্তায় নামিয়েছিলেন। কিন্তু ওই কর্মীরা আমাদের আন্দোলনের পাশে আছেন। এদিন তাঁরা নিজেরাই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিস দিয়ে আন্দোলন প্রতিহত করার চক্রান্ত করেছে পুর প্রশাসন।
এদিকে, টানা ন’ দিন ধরে শহর সাফ না হওয়ায় দুর্গন্ধে শহরে থাকা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও শহরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শহরজুড়ে দূষিত আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ায় রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আবর্জনা জমে ছোটখাট ভ্যাট তৈরি হয়েছে। ফলে শুধু রাস্তা নয়, এবার বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের। ন’দিনের টানা আন্দোলনের জেরে পুর পরিষেরা কার্যত লাটে উঠেছে। গোটা ঘটনায় আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি পুরকর্তা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অমিত রায় বলেন, আমরা নানাভাবে বাসিন্দাদের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কর্মীদের বকেয়া ভাতা মেটানোর চেষ্টা করছি। কর্মীদেরও উচিত কাজে ফেরা। একদল মানুষ অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনের ঐতিহ্যকে নষ্ট করছে।
প্রসঙ্গত, বকেয়া ভাতা না পাওয়ার জেরে গত ১ ডিসেম্বর থেকে চুঁচুড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরা পরিষেবা বন্ধ করে দেন। সেই কর্মবিরতি সোমবার ন’দিনে পা দিয়েছে। আন্দোলনের জেরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাফাইয়ের কাজ। তার জেরে নাগরিকদের ঘর থেকে রাস্তা— সবই আবর্জনাময় হয়ে উঠেছে।