থমকে আছে ই-মেডিক্যাল ভ্যান, ভোগান্তিই রোগীদের রোজনামচা
এই সময় | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
বিনয় আগরওয়াল, বালুরঘাট
ঘটনা ১: বেশ কিছুদিন থেকে পায়ের সমস্যায় ভুগছেন মহাদেব রায়। হাঁটতে গেলেই শিরায় টান লাগে। স্থানীয় বেশ কয়েকজনকে চিকিৎসককে দেখিয়েও রোগ সারেনি। নিরুপায় মহাদেব এসেছিলেন বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে।
সেখানে এসে তিনি জানতে পারেন, যে বিভাগের চিকিৎসককে তিনি দেখাবেন তিনি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বসেন। মহাদেব বলছেন, ‘আমি ঠিক মতো হাঁটতে পারি না। লাঠি নিয়ে কোনওরকমে চলাফেরা করতে হয়। পুরনো হাসপাতাল থেকে সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে আসতে খুব কষ্ট হয়েছে। ই-মেডিক্যাল ভ্যানটা থাকলে সুবিধা হতো।’
ঘটনা ২: সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন নবীন দেব বর্মণ। পায়ে জোর চোট লাগার পরে তিনি ঠিক মতো হাঁটতে পারছেন না। তিনি প্রথমে এসেছিলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে তাঁকে বলা হয়— ‘আউটডোরে চলে যান।’ এ দিকে, হাসপাতালের আউটডোর চলে গিয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটিতে। নবীন তাঁর ভাড়া করা টোটোকে আর ছেড়ে দেননি। সেই টোটো নিয়েই তিনি আউটডোরে যান। তারপরে সেখান থেকে বাড়ি। নবীন বলছেন, ‘ই-মেডিক্যাল ভ্যানটা থাকলে আমাকে এতগুলো টাকা ভাড়া গুনতে হতো না।’
দু’-এক মাস নয়, টানা প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় থমকে আছে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের ই-মেডিক্যাল ভ্যানের চাকা। আর সেই কারণে হাসপাতালের পুরনো ভবন থেকে নতুন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যাতায়াত করতে নাকাল হচ্ছেন রোগীরা। বিপাকে পড়ছেন রোগীর বাড়ির লোকজনও। বালুরঘাট হাসপাতালের এই সমস্যার কবে সুরাহা হবে, তার অবশ্য কোনও সদুত্তর নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কারিগরি কিছু সমস্যা ও চালক না থাকায় পড়ে রয়েছে ব্যাটারিচালিত ই-মেডিক্যাল ভ্যানটি। বছরখানেক ধরে সিভিল ডিফেন্সের একটি গাড়ি চলছে। কিন্তু সেই গাড়িটি বেশ উঁচু হওয়ার কারণে প্রবীণ ও মুমূর্ষু রোগীদের উঠতে অসুবিধা হয়। ওই একটামাত্র গাড়ি থাকায় রোগীদেরও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, ই-মেডিক্যাল ভ্যানটি নিচু হওয়ায় সেখানে ওঠানামা করতে সুবিধা হয়। তাছাড়া সিভিল ডিফেন্সের গাড়িটি ব্যবহার করতে পারেন কেবলমাত্র চিকিৎসাধীন রোগীরা। যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নয়, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। দ্রুত ওই ই-মেডিক্যাল ভ্যানটি চালু করা হোক।
বালুরঘাট পুরনো হাসপাতাল থেকে দশতলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। বেশিরভাগ ইউনিট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে জরুরি বিভাগ-সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট এখনও রয়েছে পুরনো হাসপাতালেই। সেখান থেকেই ঠিক করে দেওয়া হয়, রোগীকে কোন বিভাগে ভর্তি করা হবে। এ ক্ষেত্রে, রোগীকে একবার আসতে হয় পুরনো হাসপাতালে। সেখান থেকে আবার যেতে হয় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ফলে, হয়রান হতে হচ্ছে বহু রোগীকে।
দুই হাসপাতালে রোগীদের যাতায়াতের কথা ভেবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ওই ই-মেডিক্যাল ভ্যানটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয় বালুরঘাট পুরসভা। তারপর থেকে রোগীদের যাতায়াতের সমস্যা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবার জন্য চালক ছিলেন সাকুল্যে একজন। তাঁকে আবার সবসময় পাওয়া যেত না। সেই কারণে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি ভ্যানটি বন্ধ হয়ে যায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, ই-মেডিক্যাল ভ্যানে দু’জন চালক থাকার কথা ছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে একজন চালক দেওয়া হয়। অন্য চালকের ব্যবস্থা করার কথা ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে কোনও চালকের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ দিকে, পুরসভার ই-মেডিক্যাল ভ্যানটি বন্ধ থাকায় কখনও অ্যাম্বুল্যান্স, কখনও আবার টোটো ভাড়া করে রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস বলেন, ‘এই ভ্যানের বিষয়টি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কী কারণে সেটা বন্ধ হয়ে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ বালুরঘাটের পুরপ্রধান অশোক মিত্র বলেন, ‘দ্রুত সমস্যার সমাধান করে ফের ব্যাটারিচালিত ই-মেডিক্যাল ভ্যানটি চালানো হবে।’