ডাম্পিং গ্রাউন্ড: গন্ধবিচারে বন্ধ বিয়ে, ‘একঘরে’ বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দারা
এই সময় | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
ঘটনা এক– মিনু মজুমদারের মেয়ের বিয়ে সব ঠিকঠাক। ছেলের বাড়ি জলপাইগুড়ি শহরের পুলিশ লাইনে। হঠাৎ করে বেঁকে বসে পাত্রপক্ষ। জানিয়ে দেয়, এই পরিবেশের মেয়েকে তাঁরা ঘরের বউ করবেন না।
ঘটনা দুই– খোকন রায়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল চাউলহাটি এলাকায়। কিন্তু কন্যাপক্ষ শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দেয়, এখানে তাঁদের মেয়ে থাকতে পারবে না।
বাড়ির কাছেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড। যার জেরে চর্মরোগ, মশা–মাছির উৎপাত তো ছিলই। এবার উৎকট গন্ধের জেরে এর সঙ্গে যুক্ত হলো বিয়ে ভাঙার ঘটনা। গন্ধবিচার করে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এলাকার কোনও ছেলের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন না অনেকেই। একই ভাবে এলাকার কোনও মেয়েকে ঘরের বউ করে নিতেও অনীহা পাত্রপক্ষের। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিয়ে ভেঙেছে বলে বাসিন্দাদের দাবি।
এই পরিস্থিতিতে বড় সমস্যায় পড়েছেন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার বিবেকানন্দ পল্লির প্রায় হাজার সাতেক মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কারণে এলাকার পরিবেশ দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সামাজিক ক্ষেত্রেও। নোংরা আবর্জনা ক্ষতি করছে চাষের জমির। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের চার পাশে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার দাবি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু ১৬ বছর ধরে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ।
১৬ বছর আগে পাঙ্গা সাহেববাড়ি এলাকা থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড স্থানান্তরিত করে বিবেকানন্দ পল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২৫ বিঘা জমির উপরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করে জলপাইগুড়ি পুরসভা। পরবর্তীতে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কিছু দুরে ৩১ নম্বর জাতীয় সাড়কের পাশে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে বায়োগ্যাস এবং সার তৈরির প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ করে জলপাইগুড়ি পুরসভা।
কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে আবর্জনার গন্ধে নাভিশ্বাস উঠছে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা পিঙ্কি দাস বলেন, ‘সারাদিন পচা গন্ধ। কুয়ো, টিউবয়েলের জল নষ্ট হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পানীয় জল কিনে খেতে হচ্ছে।’ এলাকার যুবক বিজয় রায় বলেন, ‘আবর্জনার পাশাপাশি হাসপাতাল, বাজারের আবর্জনা,মৃত পশুর দেহও ফেলা হয়। কোনও সীমানা প্রাচীর না থাকায় অনেক সময়ে সেগুলি কুকুরে টেনে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে যায়।’
আরেক বাসিন্দা জ্যোৎস্না কেরানি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এলাকার কারও বাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠান হলে এই দুর্গন্ধে নিমন্ত্রিতরা আসতে চান না।’ সুবোধ দেবনাথ, বুলু রায়দের ক্ষোভ, বৃষ্টি হলেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ময়লা ছড়িয়ে পড়ে পাশের চাষের জমিতে। ফলে চাষের দফারফা হচ্ছে।’ এই সমস্যা নিয়ে পুরপ্রধান পাপিয়া পাল বলেন, ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।’