• ভারতে না গেলে চিকিৎসা হবে কী ভাবে, চিন্তায় বহু বাংলাদেশি
    আনন্দবাজার | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • কেউ চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত কলকাতায় যাতায়াত করছেন সাত বছর ধরে। কেউ বা আসছেন পাঁচ বছর ধরে। কারও ক্ষেত্রে আবার কাঁটাতারের ও-পারে ধরা পড়া জটিল অসুখ সেরেছে এ-পারের হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়ে। তার পরেও চেক-আপের জন্য নিয়মিত সীমান্ত পেরিয়ে আসতে হয়। কিন্তু, ইদানীং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে ‘উষ্ণায়ন’ তৈরি হয়েছে, তাতে মহা সঙ্কটে পড়েছেন চিকিৎসার জন্য নিয়মিত কলকাতায় আসা-যাওয়া করা কয়েক হাজার বাংলাদেশি। তাঁদের এ-পারে আসায় এখন কার্যত দাঁড়ি পড়েছে। নিয়মের এই ‘ফাঁস’ আলগা হয়ে কলকাতা-সহ দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার পথ কবে আবার সুগম হবে, সেই চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন পদ্মাপারের রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা।

    গণ-অভ্যুত্থানের জেরে নির্বাচিত সরকারের পতন হয়েছে বাংলাদেশে। কার্যত দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও সে দেশে সরকার পতনের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সংঘর্ষ, বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। লাগাতার গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগ আসছে সেখান থেকে। ভারত-বিরোধী নানা কাজকর্মের অভিযোগ আসছে ক্রমাগত। পড়শি দুই দেশের সম্পর্ক গত কয়েক মাসে আমূল বদলে গিয়েছে। আপাতত বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসার জন্য মেডিক্যাল ভিসা চালু থাকলেও তা পেতেও বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। একে ভিসার জটিলতা, সেই সঙ্গে কলকাতার একাধিক হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের একাংশ বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, পরবর্তী চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় হাজার হাজার বাংলাদেশি রোগী।

    ২০১৭ সাল থেকে স্ত্রীর কিডনির চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসছেন ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ মুর্তাফিজ। গত মাসেও চিকিৎসার জন্য তাঁদের কলকাতায় আসার কথা ছিল। কিন্তু আসা হয়নি। সোমবার ফোনে তিনি জানান, সাত বছর আগে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা হয়েছিল। সেই চিকিৎসকই কলকাতার মল্লিকবাজারে কয়েক মাস অন্তর রোগী দেখতে আসেন। মুর্তাফিজের কথায়, ‘‘সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই চিকিৎসক কলকাতায় এসে ঘুরে গিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীকে নিয়ে যেতে পারিনি। আপাতত যে ওষুধ চলছে, সেটাই ভরসা। কিন্তু চিকিৎসককে না দেখিয়ে এ ভাবে কত দিন চলবে?’’

    উদ্বেগের একই সুর শোনা গেল সিলেটের বাসিন্দা নুর আহমেদের গলাতেও। বছরখানেক আগে ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে তাঁর জটিল অস্ত্রোপচার হয়। সেই অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিকিৎসা আরও কয়েক বছর চালাতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। সেই কারণে তিনি নিয়মিত কলকাতায় আসেন। কিন্তু এর পরে আসতে না পারলে পরবর্তী চিকিৎসা কী ভাবে হবে, সেই চিন্তায় আপাতত ঘুম উড়েছে তাঁর। নুরের কথায়, ‘‘হঠাৎ করেই দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। এখন তো কলকাতার চিকিৎসকদের একাংশ বাংলাদেশিদের চিকিৎসা করবেন না বলে জানিয়েছেন। আমাদের মতো রোগীদের কী হবে, জানি না।’’

    বিভিন্ন দফতর ঘুরেও সীমান্ত পেরোনোর অনুমতি পাননি পাবনার বাসিন্দা মহম্মদ আলি ও জান্নাতুর ফিরদৌজ। ফোনে জান্নাতুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর স্বামী মহম্মদ আলি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। শেষ বার জানুয়ারিতে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। আবার নভেম্বরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতায় যেতে না পেরে ঢাকাতেই এক জন চিকিৎসককে দেখিয়েছি। কিন্তু আশানুরূপ ফল মিলছে না। ফুসফুসে জল জমছে। দু’দেশের সম্পর্ক মুষ্টিমেয় কয়েক জন নিজেদের স্বার্থে বিষিয়ে দিচ্ছেন। এর ফল আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের ভুগতে হচ্ছে!’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)