কীটনাশক ফসলের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত কীটনাশক ফলনে ক্ষতি করছে, ফসলের উৎপাদনও কমছে। এমনই উঠে এসেছে ‘ইকোলজিক্যাল এন্টোমোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে। এই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, পরাগ মিলনের ফলে উৎপাদিত ফলনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশকের প্রয়োগ। এই গবেষণা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সম্প্রতি প্রয়াত অধ্যাপক পার্থিব বসু এবং গবেষক মনোব্রত দাস। সঙ্গে ছিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট-এর অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং গবেষক অয়ন পাল।
মনোব্রত জানালেন, তাঁরা এই নিরীক্ষা করেছেন বেগুনগাছের উপরে। রাজ্যের তিনটি অঞ্চল— পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, সুন্দরবনের মৈপীঠ এবং উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের ২৭টি বেগুন খেতে এই পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন। বেগুনে পোকা লাগার প্রবণতা বেশি। তাই চাষিরা ওই পোকা এড়াতে বেশি পরিমাণ কীটনাশক বেগুন চাষে ব্যবহার করেন। কিন্তু এর ফলে পরাগ মিলন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতি, বেগুনের কম উৎপাদন। এর ব্যাখ্যা করে মনোব্রত জানালেন, বেগুনের ক্ষেত্রে ‘বাজ় পলিনেশন’-এর মাধ্যমে পরাগ মিলন হয়। যে সব মৌমাছি উড়লে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হয় (ব্লু ব্যান্ডেড বি), তারা একটি বিশেষ শব্দের মাধ্যমেই পরাগ সংগ্রহ করে। দেখা গিয়েছে, এই মৌমাছিরা কীটনাশকের ফলে পরাগ মিলন করতে পারছে না। করলেও তার থেকে বেগুন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাচ্ছে। মনোব্রত জানালেন, সপ্তাহে এক বারের বেশি কীটনাশক দিলেই পরাগ মিলন খুব বেশি হারে বিঘ্নিত হচ্ছে। মৌমাছি পরাগ মিলনের জন্য আসতে পারছে না। এলেও কীটনাশকের ফলে তাদের মৃত্যু ঘটছে। হিসাব দিয়ে তিনি জানালেন, দেখা গিয়েছে এর ফলে প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেগুন উৎপাদন কমতে পারে। ১০০টি ফুল থেকে গড়ে ৬০টির ক্ষেত্রে বেগুন হয়। কিন্তু কীটনাশকের প্রয়োগ বেশি করার ফলে পরাগ মিলনে বেগুন উৎপাদন কমছে তার থেকে আরও ২৭ শতাংশ।