কী করে ধরা গেল ওই নাইজেরিয়ানকে? পুলিসসূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ আগস্ট ধনিয়াখালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মৌসুমী সাহা নামের এক মহিলা। তিনি ধনিয়াখালি স্টেট ব্যাংকের কর্মী। অভিযোগে ওই ব্যাংককর্মী জানান, সমাজমাধ্যমে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি নিজেকে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। বলেন, পেশায় তিনি চিকিৎসক। এরপর আলাপ গভীর হয়। মহিলা ব্যাংককর্মীর জন্য একটি গিফট পাঠান তিনি। দিল্লি এয়ারপোর্টে সেই গিফট আটকে আছে বলা হয়। টাকা দিয়ে সেই গিফট ছাড়াতে গিয়ে ধাপে ধাপে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ২৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা দিয়ে দেন ব্যাংককর্মী। ছটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ট্রান্সফার করেন মহিলা। সেই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে আরও অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয় টাকা।
কল্যাণ সরকার বলেন, হুগলি গ্রামীণ পুলিসের সাইবার থানা এই অভিযোগের তদন্তে নামে। দেখা যায়, ন'টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটি অ্যাক্সিস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেখানে জি মেল আইডি দেওয়া রয়েছে। সেখান থেকে ফোন নাম্বার পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে দিল্লির গৌতমবুদ্ধ নগর থানা এলাকা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায় অভিযুক্ত নাইজেরিয়ার বাসিন্দা। তাঁর নাম ইজিকেন এনোগি ওঘেনা। ধৃতের কাছ থেকে কয়েকটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও পাসপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। পাসপোর্টের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। বিজনেস ভিসা নিয়ে ওই নাইজেরিয়ান ভারতে এসেছিলেন। আর এখানে এসে প্রতারণার ফাঁদ পেতে মানুষকে ঠকাচ্ছিলেন। পুলিস জানিয়েছে ব্যবসায়িক ভিসা নিয়ে ২০১৩ সালে ভারতে আসেন এই ব্যক্তি। ২০২৩ সালে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তিনি ফেরেন না। তার পর থেকেই অবৈধ ভাবে বসবাস করছিলেন নাইজেরিয়ার ওই নাগরিক। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত হবে।
গত ৬ ডিসেম্বরে তাঁকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করে ট্রান্সজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা হয়। ৮ ডিসেম্বরে চুঁচুড়া আদালতে পেশ করে সাত দিনের পুলিস রিমান্ড নেয় হুগলি গ্রামীণ পুলিস। অভিযুক্তের অবস্থান নিশ্চিত হতেই হুগলি গ্রামীণ পুলিসের একটি দল দিল্লিতে রওনা দিয়েছিল। আর তাতেই আসে সাফল্য। কল্যাণ সরকার জানান, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও দেশে ছিলেন কীভাবে-- তা নিয়েও তদন্ত হবে ফরেনার্স অ্যাক্টে। অন্য আর কোনো প্রতারণার অভিযোগ আছে কি না দেখা হবে তা-ও। ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর।